আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেন ডাকেটকে আউট করে পিঠে হাত রেখেছিলেন আকাশদীপ। সহ্য হয়নি রিকি পন্টিংয়ের। বলেছিলেন তাঁর পিঠে আকাশদীপ হাত রাখলে ঘুসি মারতেন।
সেই আকাশদীপকে দ্বিতীয় দিনে নৈশপ্রহরী হিসেবে পাঠিয়েছিল ভারত। তৃতীয় দিনের ওভাল দেখল বঙ্গক্রিকেটার আকাশ ছুঁয়েছেন। ওভালের আকাশে মেঘের আনাগোনা। আকাশদীপ ব্যাট হাতে ভারতের ভাগ্যাকাশ থেকে সরিয়ে দিলেন মেঘ। পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যানের মতো তিনি ইংল্যান্ড বোলারদের বিষ শুষে নিলেন। পঞ্চাশ করলেন। এটাই তাঁর টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম অর্ধশতরানও বটে আকাশদীপের।
আরও পড়ুন:নিজেকে ফিট রাখতে গিয়েই শেষ, মাত্র বাইশেই চলে গেলেন বাংলার উঠতি ক্রিকেটার ...
অ্যাটকিনসনকে বাউন্ডারি মেরে যখন অর্ধশতরান করলেন, তখন ওভালের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উঠে তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন রবীন্দ্র জাদেজা, অধিনায়ক শুভমান গিল-সহ অনেকে। ভারতের হেডস্যর গৌতম গম্ভীরের মুখে কে যেন ছড়িয়ে দিয়েছেন আলোর রেখা! তিনি সন্তুষ্ট। রবীন্দ্র জাদেজা দূর থেকে দেখাচ্ছেন, হেলমেটটা খুলে পঞ্চাশ উদযাপন করো। আকাশদীপের সেই সব দিকে নজর নেই। তাঁর জার্সিতে লেখা ৩১৩ নম্বর। সেটাই তিনি দেখাচ্ছেন। তাঁর মুখেও খেলা করছে হাসি।

আকাশদীপ আসলে বিহারের, খেলেন বাংলার হয়ে। টেনিস বল দিয়ে হাতেখড়ি। তাঁর বাবা চাইতেন ছেলে যেন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসেন। ছ'মাসের মধ্যে বাবা-দাদাকে হারিয়ে সেই আকাশদীপই বুঝে যান এই জীবন আসলে মেঘ ও রৌদ্রের খেলা। এই আলো তো এই অন্ধকার।
তাঁকে নিয়ে চলছিল সমালোচনা। চলছিল চর্চা। ব্যাট হাতে আকাশদীপ যাবতীয় সমালোচনা-চর্চাকে গ্যালারিতে ফেললেন। ঠিক যেমন গাব্বায় প্যাট কামিন্সকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। বিরাট কোহলি শিশুদের মতো উৎফুল্ল হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় খেলা ৩১ রান ছিল এতদিন তাঁর সর্বোচ্চ। এদিন আকাশদীপ কিন্তু সত্যিই আকাশ ছুঁলেন। ২৫ বছরে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।
এর আগে অমিত মিশ্র ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮৪ রান করেছিলেন। এটাই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান। আকাশদীপ রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। তিনি থামলেন ৬৬ রানে। আকাশদীপ পঞ্চাশ করে সাজঘরে ছড়িয়ে ছিলেন বিশুদ্ধ অক্সিজেন। ছড়িয়ে দিলেন আত্মবিশ্বাসের হাওয়া। যশস্বী জয়সওয়াল ও আকাশদীপ মিলে ১০৭ রানের পার্টনারশিপ গড়লেন।

একসময়ে টেনিস বল খেলে প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা উপার্জন করতেন আকাশদীপ। এক মাসে খেলেই কুড়ি হাজার টাকা পেতেন তিনি। সেই ছেলেই এদিন ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে স্বস্তি এনে দিলেন।
তাঁর গুরু অরুণ লাল একবার বলেছিলেন, ''আকাশ নিজেই জানে না ওর ক্ষমতা। দারুণ ব্যাটের হাত। খুব ভাল অলরাউন্ডার হতে পারে। কিন্তু নিজের ব্যাটিং নিয়ে সেরকম ভাবনাচিন্তাই করে না। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক বলেছি তুমি ভাল করে ব্যাটিং করো, কিন্তু ও খুব ক্যাজুয়াল নিজের ব্যাটিং নিয়ে।'' ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে আটটা ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি ছিল আকাশদীপের। সে তো গেল ঘরোয়া ক্রিকেটে। শনিবারের পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আকাশদীপ হাফ সেঞ্চুরিও হয়ে গেল আকাশদীপের। তিনি আউট হয়ে ফিরলেন সাজঘরে। রবীন্দ্র জাদেজা তাঁকে বীরের মতো অভ্যর্থনা জানালেন। ওভাল উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিল। আকাশ দীপ সত্য়ি সত্যিই ওভালের আকাশ ছুঁলেন।
আরও পড়ুন: শচীনকে ছাপিয়ে গেলেন সিরাজ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেগা মাইলস্টোন
