আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতিটি শিক্ষার্থীরই মনে মাঝে মধ্যে একটি প্রশ্ন জাগে, পড়াশোনার জন্য সবচেয়ে ভাল সময় কোনটি? কেউ কেউ গভীর রাতের নীরবতার কথা বলে, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে রাতে ভাল ঘুমের পর সকালের সতেজতা সবচেয়ে তীক্ষ্ণ মনোযোগ প্রদান করে। বাবা-মায়েরাও প্রায়শই বিতর্ক করেন যে তাদের সন্তানদের জন্য কোন রুটিনটি ভাল।
এই আলোচনাটি খুব একটা নতুন নয়। কয়েক দশক ধরে, শিক্ষাবিদ এবং মনোবিজ্ঞানীরা সকাল এবং রাতের পড়াশোনার ধরণ নিয়ে তর্ক করে আসছেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে একজন ব্যক্তির জৈবিক ঘড়ি, শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ, মন কখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় তা নির্ধারণে একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। কারও কারও কাছে, সৃজনশীলতা এবং মনোযোগ গভীর রাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা হয় ভোরবেলায়।
মজার ব্যাপার হল, সাংস্কৃতিক অভ্যাসও পড়াশোনার রুটিনকে প্রভাবিত করে। অনেক পশ্চিমি দেশে, শিক্ষার্থী এবং পেশাদাররা সন্ধ্যার পরেও উৎপাদনশীলভাবে কাজ করতে দেখা যায়। অন্য দিকে, এশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ঐতিহ্যগতভাবে ভোরে পড়াশোনার উপর জোর দেয়, শৃঙ্খলা এবং সাফল্যকে ভোর হওয়ার আগে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়।
কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, ‘আপনার জন্য কোনটি সবচেয়ে ভাল কাজ করে?’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে উত্তরটি ব্যক্তিগত জীবনধারা, শক্তির ধরণ এবং স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। পড়াশোনা কেবল একটি বই খোলার বিষয় নয়, এটি একটি মানসিক এবং শারীরিক ব্যায়াম, যখন শরীরের স্বাভাবিক ছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তখন সবচেয়ে কার্যকর।
গভীর রাতে পড়াশোনা
অনেক শিক্ষার্থী গভীর রাতে পড়াশোনাকে আদর্শ বলে মনে করে, বিশেষ করে যারা নির্জনতা পছন্দ করেন। পরিবেশ শান্ত থাকে, ফোন খুব কমই বেজে ওঠে এবং বন্ধুবান্ধব বা গৃহস্থালির কাজকর্ম থেকে ব্যাঘাত ন্যূনতম হয়। সৃজনশীল চিন্তাভাবনা বা দীর্ঘ সেশনের জন্য, রাতের পড়াশোনা প্রায়শই কার্যকর প্রমাণিত হয়।

সুবিধা
- শান্ত পরিবেশ মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
 - কম ব্যাঘাত গভীর মনোযোগের সুযোগ করে দেয়
 - রাতে সৃজনশীলতা প্রায়শই বিকশিত হয়
 - দীর্ঘ, নিরবচ্ছিন্ন অধ্যয়ন সেশন সম্ভব
 
অসুবিধা
- ঘুম কম হলে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে
 - তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে
 - ক্লান্তির কারণে সকালের পরীক্ষা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে
 
সকালের পড়াশোনা
অন্যদিকে, যারা রাতের পূর্ণ ঘুমের পর সতেজ হয়ে ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের কাছে সকালের পড়াশোনা বেশি পছন্দের। তাজা বাতাস, নীরবতা এবং শরীরের নতুন শক্তি আরও নতুন উদ্যোমে নতুন কিছু শেখার ইচ্ছেকে জাগিয়ে তোলে।
সুবিধা
- বিশ্রামের পর মন সতেজ থাকে, স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী হয়
 - সকালের শক্তি মনোযোগ বৃদ্ধি করে
 - দিনের সময়সূচী পরিকল্পনা করা সহজ হয়
 - শারীরিক এবং মানসিক উভয় সুস্থতাকেই সমর্থন করে
 
অসুবিধা
- সবার জন্য তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা সহজ নয়
 - শীতের সকালে বিছানা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে
 - রাত জেগে থাকার ফলে সকালের রুটিন ব্যাহত হয়
 
উভয় রুটিনেরই আলাদা আলাদা সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। মূল বিষয় হল আত্মসচেতনতা। কিছু শিক্ষার্থী রাতে ধারণাগুলি আরও ভালভাবে ধরে রাখতে পারে, আবার অন্যরা সকালে আরও কার্যকরভাবে পাঠগুলি উপলব্ধি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আপনার জন্য কোনটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উভয় সময়সূচী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।
