আজকাল ওয়েবডেস্ক: এ যেন মানবতা ও ক্রূরতার এক আশ্চর্য আখ্যান! মনিবের জীবন বাঁচাতে নিজের শরীর থেকে একটি কিডনি হাসিমুখে দান করেছিলেন অধস্তন কর্মী। ভেবেছিলেন, এই ত্যাগের পর দু’জনের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। কিন্তু প্রতিদানে জুটল কেবলই লাঞ্ছনা এবং অপমান। শেষে চাকরি থেকেই বরখাস্ত করা হল তাঁকে! আমেরিকার লং আইল্যান্ডের বাসিন্দা ডেবি স্টিভেন্সের এই করুণ কাহিনিই ঝড় তুলেছে সমাজমাধ্যমে। কর্মক্ষেত্রের নৈতিকতা নিয়ে তুলে দিয়েছে এক বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন।
ঘটনার সূত্রপাত বছর খানেক আগে। ৪৭ বছর বয়সী ডেবি জানতে পারেন, তাঁর বসের কিডনি খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিডনি প্রতিস্থাপন অত্যন্ত জরুরি। বসের জীবন বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ডেবি। এর ফলে তাঁর বস কিডনি পান। সর্বোপরি ফিরে পান নতুন জীবন। ডেবির এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ তখন প্রশংসিত হয়েছিল সর্বত্র।
কিন্তু গল্পের মোড় ঘুরে যায় অস্ত্রোপচারের পর ডেবি কাজে ফিরতেই। তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর এই বিশাল ত্যাগের পর কর্মক্ষেত্রে বাড়তি সহানুভূতি পাবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটল ঠিক তার উল্টো। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বসকে অনুরোধ করেন, তাঁকে যেন কিছুটা হালকা কাজ দেওয়া হয়। পাশাপাশি অনুরোধ করেন তাঁকে যেন অফিসের শৌচাগার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
ডেবির অভিযোগ, তাঁর বস সেই সামান্য অনুরোধটুকুও রাখেননি। শুধু তাই নয়, এরপর থেকেই শুরু হয় তাঁর উপর মানসিক অত্যাচার। প্রথমে তাঁকে পদাবনতি করে একটি গুরুত্বহীন পদে পাঠানো হয়। তারপর তাঁকে মূল অফিস থেকে সরিয়ে ৫০ মাইল দূরের এক গুদামঘরে বদলি করা হয়, যেখানে শৌচাগারের অবস্থাও ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। ডেবির কথায়, “আমি ওঁর জীবন বাঁচানোর জন্য আমার শরীরের একটি অংশ দিয়ে দিলাম, আর উনি আমাকে একপ্রকার তাড়িয়ে দিলেন।”
অপমানের এখানেই শেষ নয়। কয়েক মাস পরেই ‘ঠিকমতো কাজ করছেন না’ এই অজুহাত দেখিয়ে ডেবিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এই চরম বিশ্বাসঘাতকতায় ভেঙে পড়ে তিনি আইনের দ্বারস্থ হন ডেবি। প্রতিবন্ধী কর্মীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগে তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মানবিকতা এবং নৈতিকতা কি এতই ঠুনকো? এই চরম অবিচার কি শুধুই এক বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি কর্পোরেট দুনিয়ার এটাই ছবি? প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনদের একটি বড় অংশ।