কার কখন মৃত্যু আসবে কেউ বলতে পারেন না। সব কিছুর আগাম খবর জানা গেলেও মৃত্যুর কোনও আভাস দিতে পারে না বিজ্ঞানও। হাজারও রোগভোগের পর অনেকে মারা যান। আবার কখনও সুস্থ মানুষ ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রিয়জনেরা বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অনেককেই বলতে শোনা যায়, ঘুমের মধ্যে যেন শান্তিতে চলে যেতে পারি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে যারা মারা যান, তাঁরা কি সত্যি কোনও কষ্টভোগ করেন না? সে উত্তর অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে গবেষক ও চিকিৎসকদের মতে, ঘুমের সময় মৃত্যু সবসময় শান্তিপূর্ণ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর পিছনে কী কী কারণ থাকতে পারে সেবিষয়ে জেনে নেওয়া যাক-
* হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকঃ ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হল হৃদযন্ত্রের আচমকা বিকল হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে রাত্রিকালীন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
আরও পড়ুনঃ কিছুতেই পড়া মনে করতে পারছে না সন্তান? রোজ ৫ অভ্যাস রপ্ত করলেই বাড়বে শিশুর মেধা
* স্ট্রোকঃ স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে ঘুমের মধ্যেই কেউ অচেতন হয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় মানুষ বুঝতেও পারেন না এবং চিকিৎসা পাওয়ার আগেই মৃত্যু ঘটে যায়।
* স্লিপ অ্যাপনিয়াঃ অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া নামে এক ধরনের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, যেখানে ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এতে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, যা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। স্লিপ ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যাও ঘুমের মধ্যে মৃত্যুতে অনেকাংশেই দায়ী।
* ডায়াবেটিস ও হাইপোগ্লাইসেমিয়াঃ বিশেষত টাইপ–১ ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে রাতে রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ কমে গেলে ‘ডেড ইন বেড সিনড্রোম’ হতে পারে। যা অনেকসময় মারাত্মক আকার নেয়।
* বিষক্রিয়া ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ ঘুমের আগে নেওয়া ঘুমের ওষুধ বা সেডেটিভস বেশি খাওয়া হলে শ্বাসরোধ হতে পারে। আবার বদ্ধ ঘরে দরজা, জানলা বন্ধ করে ঘুমোতে গেলেও মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়তে পারে। কারণ এক্ষেত্রে অজান্তে গ্যাস লিক বা কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়াও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

* স্নায়বিক সমস্যা ও এপিলেপসিঃ যাদের মৃগী রোগ বা এপিলেপসি আছে, তাঁরা ঘুমের মধ্যে সিজার (খিঁচুনি) চলাকালীন শ্বাসরোধে মারা যেতে পারেন। এই ধরণের মৃত্যুকে বলে
এছাড়াও অনেক সময়ে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর কোনও স্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন এটিকে "অজানা কারণে হঠাৎ মৃত্যু" বলা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শরীরের ভেতরে চলমান কোনও সমস্যা আগে থেকেই সক্রিয় থাকে।
প্রতিরোধের উপায়
মৃত্যু আগে থেকে বলে কয়ে আসে না ঠিকই, তাও বিপদ এড়াতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। ঘুমের অভ্যাসও ঠিক রাখতে হবে। সময় থাকতেই স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করান। ডায়াবেটিস থাকলে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কার্বন মনোক্সাইড ডিটেক্টর ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ঘুমের আগে কোনও অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
