আজকাল হাঁটুর সমস্যা দ্রুত বাড়ছে। হাঁটুর ব্যথা এবং ফোলা অনেকের চলাফেরাকে কষ্টকর করে তুলছে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে মানুষ হাঁটুর ব্যথায় বেশি ভুগছেন। তবে এই সমস্যা এখন আর কেবল বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তরুণদের মাঝেও এটি দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় এর কারণ হতে পারে আর্থ্রাইটিস, ইউরিক অ্যাসিড বা পুরনো আঘাত। কিন্তু জানেন কি, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের অভাবও হাঁটুর ব্যথা ও ফোলার অন্যতম কারণ হতে পারে?
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি– মেডিক্যাল নিউজ টুডে–র রিপোর্ট অনুযায়ী, শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং জয়েন্টে প্রদাহ দেখা দেয়। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে, যা হাড়কে মজবুত রাখার জন্য অপরিহার্য। যদি শরীরে যথেষ্ট ভিটামিন ডি না থাকে, তাহলে হাঁটুর জড়তা, ফোলা এবং হাঁটাচলায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এই ভিটামিন মূলত সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায়। যারা অধিকাংশ সময় ঘরের ভিতরে কাটান, তাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি দেখা যায়। তাই যদি হাঁটুর ব্যথা বা ফোলা থাকে, তাহলে অবশ্যই ভিটামিন ডি পরীক্ষা করানো উচিত এবং এর ঘাটতি পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন গবেষণাতেও হাঁটুর সমস্যার সঙ্গে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।
হাঁটুর সমস্যায় ভিটামিনের ঘাটতির ভূমিকা
হাঁটুর সমস্যার জন্য শুধু ভিটামিন ডি নয়, বরং ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন কে–এর অভাবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ভিটামিন সি-এর ঘাটতি
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং জয়েন্টের প্রদাহ (ইনফ্ল্যামেশন) কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরে কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে, যা হাড় এবং জয়েন্টের কার্টিলেজকে (নরম টিস্যু) মজবুত রাখে। এর অভাবে জয়েন্ট দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফোলাভাব বেড়ে যায়।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবু, কমলা, আমলকি, টমেটো এবং সবুজ শাকসবজি রাখলে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি সহজেই পূরণ করা যায়।
ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি
ভিটামিন বি১২ স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ও নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য অপরিহার্য। এর অভাবে শরীরে ঝিনঝিন ভাব, ক্লান্তি, স্নায়ুর প্রদাহ এবং হাঁটুর ফোলা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি হাঁটুর ব্যথা এবং চলাফেরায় অসুবিধার কারণ হতে পারে।
ভিটামিন বি১২-এর প্রধান উৎস হল ডিম, দুধ, দই, পনির এবং মাছ–মাংসজাত খাবার। নিরামিষভোজীদের জন্য বি১২ সাপ্লিমেন্ট বা ফোর্টিফায়েড ফুড উপকারী হতে পারে।
ভিটামিন কে-এর ঘাটতি
ভিটামিন কে হাড়কে মজবুত রাখতে এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে, জয়েন্টে ব্যথা ও প্রদাহ বেড়ে যায়।
ভিটামিন কে পাওয়া যায় পালং শাক, ব্রোকলি, সবুজ শাকসবজি ও সবুজ বিনস–এ।
হাঁটুর ব্যথা, ফোলা এবং দুর্বলতা শুধু আর্থ্রাইটিস, ইউরিক অ্যাসিড বা বয়সজনিত কারণে হয় না। অনেক সময় ভিটামিন ডি, সি, বি১২ ও কে-এর ঘাটতিও এই সমস্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিয়মিত সুষম খাদ্য, সূর্যের আলো, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে হাঁটুর সমস্যা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
