আধুনিক বিজ্ঞান জানাচ্ছে, শীতের সময় দিন ছোট হতে থাকলে রাতের খাবারের সময়ও বদলানো জরুরি। সঠিক সময়ে রাতের খাবার খেলে বিপাকক্রিয়া, মেজাজ এবং ঘুম—তিনই উন্নত হয়।

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম আলো–অন্ধকারের চক্র অনুসরণ করে। শীতকালে সূর্যাস্ত তাড়াতাড়ি হওয়ার কারণে পরিপাকক্রিয়াও মন্থর হয়ে যায়। তাই সন্ধ্যার আগেই রাতের খাবার খাওয়াই বেশি উপকারী।

ক্রোনোনিউট্রিশন: কখন খাচ্ছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ
সম্প্রতি ক্রোনোনিউট্রিশন বা খাবারের সময়বিজ্ঞান জানাচ্ছে—আপনি কী খাচ্ছেন, তার পাশাপাশি কখন  খাচ্ছেন, সেটিও স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।


গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রাত ১০টায় খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ফ্যাট পোড়ার গতি কমে যায়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে খাবার খেলে এই সমস্যাগুলি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আগে খাওয়ার উপকারিতা

দিনের প্রথম ভাগে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ এবং রাতের খাবার হালকা ও আগেভাগে খাওয়া সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর ফলে—

রক্তচাপ, রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করে
হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে
হজম ভাল হয়
ঘুমের মান উন্নত হয়
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে

শীতকালে কম সূর্যালোক এবং ছোট দিন সার্কাডিয়ান রিদমের ছন্দ নষ্ট করে মন-মেজাজে প্রভাব ফেলে। এটিই ‘সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার’ নামে পরিচিত। ফলে অনেক সময় রাতে অনিয়ন্ত্রিত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যা হজমের সমস্যা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

রাতের খাবারের আদর্শ সময়
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—
বিকেল ৫.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রাতের খাবার
অথবা অন্তত ঘুমোতে যাওয়ার ২–৩ ঘণ্টা আগে খেয়ে ফেলা
দিনের আলো থাকার সময় বিপাকক্রিয়া সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, তাই সকালের জলখাবার এবং দুপুরের খাবার হওয়া উচিত অধিক পুষ্টিকর।

তবে ব্যক্তিভেদে রুটিন ভিন্ন হতে পারে। যাঁরা শারীরিক ভাবে বেশি সক্রিয়, তাঁদের দেরিতে খাবার প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু যাঁরা কম সক্রিয়, তাঁদের জন্য আগেভাগে খাওয়াই বেশি উপকারী।


শীতকালে স্বাস্থ্য ভাল রাখতে শুধু কী খাচ্ছেন তা নয়—কখন খাচ্ছেন, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দিনের আলো কমে গেলে শরীরের স্বাভাবিক তাল বদলে যায়, আর সে সঙ্গে বদলাতে হয় আমাদের খাদ্যাভ্যাসও। তাই রাতের খাবার আগে খেলে এবং হালকা রাখলে হজম, ঘুম, শক্তি—সবকিছুই ভাল থাকে। নিজের শরীরের ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সচেতনভাবে খাবারের সময় নির্ধারণ করাই শীতের সুস্থতার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়।