আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্পর্কটা সবে মাসখানেকের। এরই মধ্যে সঙ্গী আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দিনে-রাতে অনবরত ফোন, মেসেজ। দামি উপহারে ভরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন দেখানো- সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, এমন মানুষই তো জীবনে চেয়েছিলেন! স্বপ্নের রাজকুমার বা রাজকন্যাকে খুঁজে পাওয়ার এই অনুভূতি নিঃসন্দেহে সুখের। কিন্তু সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্বপ্নের আড়ালেই লুকিয়ে থাকতে পারে এক গভীর মানসিক ফাঁদ, যার নাম ‘লভ বম্বিং’।
‘লভ বম্বিং’ কথাটি শুনতে ইতিবাচক মনে হলেও, এটি আসলে এক ধরনের মানসিক নির্যাতন এবং নিয়ন্ত্রণের কৌশল। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, যখন কোনও ব্যক্তি একটি সম্পর্কের শুরুতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপরজনকে অত্যাধিক স্নেহ, প্রশংসা এবং মনোযোগ দিয়ে আচ্ছন্ন করে ফেলেন, তখন তাকে ‘লভ বম্বিং’ বলা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল, অপর মানুষটিকে দ্রুত আবেগগতভাবে নির্ভরশীল করে তুলে তার উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা।

কীভাবে চিনবেন ‘লভ বম্বিং’-এর লক্ষণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কয়েকটি সুস্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে।
অস্বাভাবিক দ্রুততা: সম্পর্ক শুরুর অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ‘আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না’ বা ‘তুমিই আমার জীবনের সেরা মানুষ’-এর মতো চূড়ান্ত আবেগী কথা বলা।
উপহারের বন্যা: আপনার আর্থিক বা সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন দামি উপহার দিয়ে আপনাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করার চেষ্টা।
অবিরাম যোগাযোগ: সারাক্ষণ ফোন, টেক্সট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ রাখা। আপনি একা বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে তাতেও আপত্তি বা অভিমান প্রকাশ করা।
অতিরিক্ত প্রশংসা: আপনার সাধারণ গুণগুলিকেও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এমনভাবে প্রশংসা করা, যা অনেক সময়ই অবাস্তব শোনায়।
সম্পর্কে এর নেতিবাচক প্রভাব কী?
‘লভ বম্বিং’ আদতে একটি সুস্থ সম্পর্কের ভিতকেই দুর্বল করে দেয়। এর প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক ও সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মনোবিদরা সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে লিখেছেন, “লভ বম্বিং-এর প্রথম পর্যায়টি স্বপ্নের মতো হলেও, দ্বিতীয় পর্যায়টি ঠিক তার বিপরীত। শিকার যখন সম্পূর্ণরূপে আবেগের জালে জড়িয়ে পড়েন, তখন ‘লভ বম্বার’ তার আসল রূপে ফিরে আসেন।” কারণ এরপরই শুরু হয় অবমূল্যায়ন। যে মানুষটি একদিন প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন, তিনিই হঠাৎ করে সব বিষয়ে সমালোচনা শুরু করেন। স্নেহ এবং মনোযোগ আগের মতো থাকে না। সঙ্গীকে তার বন্ধু বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেন। এর ফলে, আক্রান্তের আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে। তিনি ভাবতে শুরু করেন, সব দোষ হয়তো তাঁরই এবং পুরনো সেই ‘স্বপ্নের দিনগুলো’ ফিরে পাওয়ার জন্য সঙ্গীর সব অন্যায় মেনে নিতে শুরু করেন। এভাবেই তৈরি হয় এক বিষাক্ত এবং নির্ভরশীলতার সম্পর্ক।

প্রকৃত ভালবাসা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সময়ের উপর ভিত্তি করে। সেখানে আবেগের এমন অস্বাভাবিক বিস্ফোরণ থাকে না। তাই কোনও সম্পর্কের শুরুতে যদি মনে হয় সবকিছুই যেন ‘অবাস্তব ভাল’, তবে একবার থমকে দাঁড়ানো প্রয়োজন। বাস্তবের মাটিতে পা রেখে, নিজের সীমানা নির্ধারণ করে এবং সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিয়ে চেনার চেষ্টা করলেই এই ধরনের মানসিক ফাঁদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
