ইদানীং স্মার্টফোন স্ক্রল, সমাজ মাধ্যমে রিলের নেশায় যেন বুঁদ হয়ে উঠছে আট থেকে আশি। এমন এক ডিজিটাল জীবনে এক নতুন মানসিক অবস্থা সামনে এসেছে যাকে বলা হয় পপকর্ন ব্রেন সিনড্রোম। ভারতে বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
ঠিক কী এই পপকর্ন ব্রেন সিনড্রোম? আসলে এই শব্দটি দেওয়া হয়েছে কারণ এই সমস্যায় মস্তিষ্কে এমন উত্তেজনায় হয় যে, একের পর এক শট নিয়ে চলছে-ঠিক যেমন পপকর্ন মাইক্রোওয়েভে ফেটে যায়। এক জায়গায় মন ধরে রাখা যায় না।
নিরবিচ্ছিন্ন স্ক্রিন-টাইম ও দ্রুত ভিডিও-স্ক্রলিং মস্তিষ্ককে এমন অভ্যাসে ফেলে যা স্থির মনোযোগ, গভীর চিন্তা ও ধীরে ধীরে কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মন তাড়াহুড়ো করে এক গ্যাজেট থেকে আরেক গ্যাজেটে ছুটে যায়।
লক্ষণ কী
* একটানা কাজ বা পড়াশোনা করতে মন বসছে না
* ফোন বা স্ক্রিন ছাড়া থাকা মুহূর্তগুলো অসম্পূর্ণ মনে হওয়া
* ঘুমের গুনমান কমে যাচ্ছে, ঘুম ভাঙছে বা ঘুমের সময় ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
* কথা বলার সময় মন অন্যদিকে ছুটছে, দ্রুত বিরক্তি তৈরি হচ্ছে
সাধারণ কথা-বলে মন খারাপ অনুভব হচ্ছে, থিতিয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এগুলো শুধু অস্থায়ী 'বোরডম' নয়, সঠিকভাবে না সামলে চললে দৈনন্দিন জীবনের কাজ, পড়াশোনা ও সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্রিন-ব্যবহারে অতিরিক্ত যুক্ত রয়েছে এমন কিশোর ও তরুণরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। কারণ তাঁদের মস্তিষ্ক এখনও বিকাশের মাঝামাঝি রয়েছে। এছাড়া যারা একাধিক গ্যাজেট দিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে মনের স্থিরতা কমে যায়, মনোযোগ বিভক্ত হয়। পড়াশোনা ও কাজের মান নেমে আসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল থামলেও একটানা কথা বলায় বা বই পড়ায় মন আসে না। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
স্ক্রিন-টাইম সীমিত করুন; ফোন-নোটিফিকেশন কমিয়ে দিন
প্রতিদিন কিছু সময় পুরোপুরি ডিজিটাল-ফ্রি রাখুন। বদলে পড়াশোনা বা হাঁটা-চলা করুন।
ধ্যান, মাইন্ডফুলনেস বা শান্ত পরিবেশে থাকা মনকে প্রশমিত করুন।
প্রযুক্তি উপকারী কিন্তু আপনি তার নিয়ন্ত্রণে থাকবেন নাকি আপনি নিয়ন্ত্রণ করবেন তা বুঝুন।
পপকর্ন ব্রেন এখনও নির্ধারিত চিকিৎসাজনিত রোগ নয়, তবে তা নিশ্চিতভাবেই এক নতুন ডিজিটাল যুগের মানসিক চ্যালেঞ্জ। আমাদের মস্তিষ্ক কোয়ালিটি রিল্যাক্সেশন ও ধীরে-চিন্তার জন্য তৈরি। যখন আমরা অপ্রতিরোধ্য স্ক্রিন-টাইমে অভ্যস্ত হই, তখন ধীরে-ধীরে সেই ধীরতম চিন্তার রূপরেখা হারিয়ে যায়। তাই শুধুই প্রযুক্তি এড়িয়ে চলাই নয়, সচেতন ব্যবহারই এই সমস্যার মোকাবিলার চাবিকাঠি।
