পুজো আসতে আর মাস দেড়েক বাকি। ইতিমধ্যে   উৎসবের আমেজ যে শুরু হয়ে গিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। দুর্গাপুজো মানেই জমিয়ে সাজগোজ, প্যান্ডেল হপিং, জমাটি আড্ডার মেজাজ। ঘরে হোক কিংবা বাইরে, পুজোর সময়ে সকলের মাঝে মধ্যমণি হয়ে উঠতে কে না চান! তাই তো সারা বছর যতই সময়ের অভাব থাকুক, দুর্গাপুজোর আগে বাঙালিকে নিজের যত্ন নেওয়ায় হার মানাবে কার সাধ্যি! কারওর চিন্তা অল্প দিনে ঝরাতে হবে মেদ, কেউ আবার চটজলদি ফিরে পেতে চান ত্বক-চুলের জেল্লা। যার জন্য খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই, সামান্য কয়েকটি নিয়ম মানলেই এবারের পুজোয় তাক লাগাতে পারবেন আপনি। 

স্লিম-ফিট চেহারার কৌশল 

সারা বছর যতই নিজের দিকে তাকানোর ফুরসত না পাওয়ার বাহানা থাকুক, পুজোয় পছন্দের পোশাক পরতে না পারলেই শরীরের প্রতি টনক নড়ে বাঙালির। তাই তো শেষ মুহূর্তে মেদ ঝরাতে অনেকেরই চেষ্টার খামতি রাখেন না। কেউ ভর্তি হন জিমে, কারওর ডায়েটে বাদ যায় পছন্দ খাবার। এককথায় পুজোর আগে ছিপছিপে হওয়ার লক্ষ্যে সব কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করে পারে বাঙালি। কিন্তু তাতেও যে সবসময়ে লাভ হবে এমনটা নয়, সঙ্গে শর্টকাট পন্থায় ওজন কমালে শরীরের বারোটা বাজার ঝুঁকি থাকে। বরং নিয়ম করে মেনে চলুন কয়েকটি টিপস, তাহলেই মিলবে সুফল।

•    যে কোনও ডিটক্স পানীয় হজমে সাহায্য করে, শরীরে মেটাবলিজম বাড়ায়। নিয়মিত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা রকমের স্বাস্থ্যকত পানীয় রোজনামচায় রাখুন। কখনও এক গ্লাস জলে লেবু, কিছু পুদিনা পাতা, কয়েকটি শশা কেটে জলে ফেলে দিন। আবার ঈষদুষ্ণ জলে লেবু, মধু দিয়েও পান করতে পারেন। সকালে এক গ্লাস জলের সঙ্গে এক চিমটে ‘হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট’ মিশিয়েও খেতে পারেন। এই সব পানীয় ওজন কমাতে সাহায্য করে। একদিন অন্তর ডাবের জল খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে। 

•    পুজোর আগে কয়েকদিন খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে প্রোটিন, ফাইবারের পরিমাণ বাড়ান। রিফাইন্ড ময়দা জাতীয় খাবার, বাইরের যে কোনও জাঙ্ক ফুড খাওয়া বন্ধ রাখুন।

•    পর্যাপ্ত না ঘুমালেও ছিপছিপে চেহারা পাওয়ার সব চেষ্টাই বৃথা হবে। ওজনের সঙ্গে বাড়বে ক্লান্তিও। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ফোন,টিভি, ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন।

•    খাদ্যাভাস ঠিক রাখলেও নিয়মিত করতে হবে ব্যায়াম। ওজন কমানোর জন্য যে জিম যেতেই হবে, এমনটা নয়। বাড়িতেই শরীরচর্চা করতে পারেন। এখন ইউটিউবে অথবা ইনস্টাগ্রামে পেয়ে যাবেব ওজনা কমানোর হরেক ভিডিও। তবে একেবারে অভ্যাস না থাকলে প্রথমেই খুব বেশি পরিশ্রমের ব্যায়াম করতে যাবেন না। ওয়ার্কআউটের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি, সারাদিন নিজেকে সক্রিয় রাখুন। 

ত্বকের যত্ন

বাঙালি সারা বছর শুধু ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে কাটিয়ে দিলেও পুজোর সময়ে ফেসিয়াল থেকে প্রসাধনী সহ ত্বকের নানা পরিচর্যায় ঝোঁক বাড়ে। ভিড় বাড়তে থাকে পার্লারে। পকেটে যতই টান পড়ুক, উৎসবের মরশুমে নজরকাড়া হয়ে উঠতে চান কম-বেশি সকলেই। তাই সময় থাকতেই শুরু করে দিন রূপচর্চা। 

•    চটজলদি জেল্লা আনতে শুধু নামীদামি প্রোডাক্ট মাখলেই হল না, প্রথমেই দরকার নিদিষ্ট সিটিএম রুটিন মেনে চলা। যার জন্যে দিনে দু’বার প্রথমে ক্লিনজারের মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করুন, এরপর লাগান টোনার এবং শেষে ত্বক অনুযায়ী ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ফেস সিরামও লাগাতে পারেন। এই নিয়মে কয়েকদিনে ফিরে পাবেন ত্বকের হারানো জেল্লা।

•    ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন কতটা জরুরি তা আজকাল সকলেরই জানা। সকালে বেরনোর ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগান। মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। নাহলে যতই প্রসাধনী ব্যবহার করুন, ত্বকের জৌলুস বজায় রাখতে পারবেন না। 

•    সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করতে ভুলবেন না। ত্বক অনুযায়ী পছন্দের স্ক্রাব ব্যবহার করুন। ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার হলে ত্বকরন্ধ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছবে। এতেই বাড়বে ত্বকের জেল্লা। 

•    চাইলে পুজোর আগে দু-তিনটে ফেসিয়াল করিয়ে নিতে পারেন। ২০ দিন অন্তর ফেসিয়াল করাতে পারলে ভাল।

•     ত্বকের যত্নে বহু যুগ ধরে ঘরোয়া প্যাকের কদর রয়েছে। পুজোর আগে মুসুর ডাল, বেসন, কস্তুরি হলুদ, কেশর, দুধের সর, চন্দন গুঁড়ো এবং গোলাপের পাপড়ি একসঙ্গে মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন একটি মিশ্রণ। প্রতিদিন মুখে এবং সারা শরীরে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতেই আলাদা জেল্লা আসবে।

•    অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে কর্পূর তেল এবং লবঙ্গ তেল মিশিয়ে তাতে ১ চামচ সাদা চন্দন গুঁড়ো মিশিয়ে একটি প্যাক বানাতে পারেন।ব্রণ-র্যাশের সমস্যায় ভুগলে এই প্যাকটি লাগালে উপকার পাবেন। 

•    মুখে ব্ল্যাক হেড বা হোয়াইট হেডের সমস্যা থাকলে ওটের গুঁড়ো, এক চামচ শসার রস এবং ২ ফোঁটা পেপারমিন্ট তেল মিশিয়ে মুখে ঘষলেই মৃত কোষ দূর হবে।

•    ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে বেশি করে ফল এবং সবজি খান। রংবেরঙের ফল এবং সবজিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গে ডায়েটে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। ত্বক ভাল রাখতে হলে দিনে অন্ততপক্ষে ৮ গ্লাস জল খাওয়া জরুরি। 

•    শুষ্কতা দূরে করে ত্বকে টানটান ভাব আনতে অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন। অ্যালকোহল, ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। ঘন ঘন চা, কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও কমিয়ে ফেলুন। 

চুলের যত্ন

রেশমি ঘন কালো চুল সকলেরই স্বপ্ন। বর্তমানে দূষণ, ধুলোবালি, ঘাম সহ আধুনিক ব্যস্ততার জীবনযাপনে চুল নিয়ে সমস্যার শেষ নেই আট থেকে আশির। সারা বছর কোনও মতে বেঁধে বাইরে বেরিয়ে গেলেও পুজোর সময় পোশাকের সঙ্গে মানানসই হেয়ারস্টাইল না করলেই নয়! তবে শুধু হেয়ারকাট কিংবা নামীদামি ট্রিটমেন্ট অথবা হেয়ারকালার করলেই তো আর স্টাইলিংই হয় না! ঘন, উজ্জ্বল চুল পেতে চাই সঠিক যত্নও। তাই মেনে চলুন কয়েকটি সহজ নিয়ম।

•     নারকেল তেলের সঙ্গে মেথি, কালো জিরে, কারি পাতা, গোটা ধনে, ছাচি পেয়াঁজ ও আমলকি ফুটিয়ে ঘরোয়া তেল বানিয়ে লাগালে উপকার পাবেন। সপ্তাহে ২ দিন এই তেল ব্যবহারে করলেই কমবে খুশকি, চুল পড়া, বাড়বে চুলের জেল্লা। 

•    চুল পড়ার সমস্যা বেশি থাকলে শুধু পেঁয়াজের রসও লাগাতে পারেন। পেঁয়াজ থেঁতো করে, রস বার করে তা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। প্রায় ৪০ মিনিট রেখে ভাল করে মাথা ধুয়ে ফেললেই চুল ঝরা অনেকটাই আটকাবে।

•    এক দিন অন্তর শ্যাম্পু করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে শ্যাম্পু করার আগের দিন মাথায় ভাল করে তেল মাসাজ করে নিন। চুলের জন্য সঠিক শ্যাম্পু বাছাই করা জরুরি। সোডিয়াম সালফেটের মতো রাসায়নিক রয়েছে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

•    শ্যাম্পু করার পরে ভালভাবে চুল ধুয়ে তবেই কন্ডিশনার লাগান। চুলে গরম ভাপ অর্থাৎ স্টিম দিতে পারলে ভাল। চুলকে গরম থেকে বাঁচাতে হিট প্রোটেকটেড কন্ডিশনারও ব্যবহার করতে পারেন। 

•    ভিজে চুল আঁচরাবেন না। একইসঙ্গে বারবার আঁচড়ালে চুলের ডগায় চিড় ধরে। ফলে চুল দুর্বল হয়ে উঠে যেতে পারে। তাই যতটা সম্ভব চুল কম আঁচড়ানোর চেষ্টা করুন।

•    পুজোর আগে আলাদা করে চুল কাটতে না চাইলেও চেরা ডগাগুলো ট্রিম করে নিন। এতেও খানিকটা চুলের স্বাস্থ্য ফিরবে।

•    শুধু বাহ্যিক পরিচর্যা নয়, ভাল চুলের জন্য ভিতর থেকে পুষ্টি জোগানো প্রয়োজন। রোজ ভিটামিন, বায়োটিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।