স্তন ক্যানসার শুনলেই আমাদের মনে সাধারণত মহিলাদের কথা মাথায় আসে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগ শুধুমাত্র মহিলাদের নয়, পুরুষদেরও হতে পারে। যদিও আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম, তবুও সচেতনতার অভাবে অনেক পুরুষই সময়মতো রোগ নির্ণয় করাতে পারেন না। ফলে দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে।


চিকিৎসকদের মতে, পুরুষদের শরীরেও অল্প পরিমাণে স্তন টিস্যু থাকে। তাই ক্যানসার কোষ সেখানে বাড়তে পারে। কিন্তু সমস্যা হল, বেশিরভাগ পুরুষই স্তনে কোনও পরিবর্তন বা গাঁট টের পেলেও তা গুরুত্ব দেন না। এই কারণে প্রাথমিক ধাপে রোগ শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পুরুষেরা যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন জেনে নিন-

*স্তনে বা বুকের উপরে গাঁট বা শক্ত ভাব: এটি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। সময়ের সঙ্গে গাঁটটি বড়ও হতে পারে।

*ত্বকের গঠন পরিবর্তন: স্তনের চারপাশের ত্বকে ভাঁজ পড়া, টান টান হয়ে যাওয়া, বা রুক্ষতা দেখা দিতে পারে।

*স্তনবৃন্তে অস্বাভাবিকতা: স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, শক্ত হয়ে যাওয়া, ব্যথা বা চুলকানি হওয়া।

আরও পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে চা-কফি খেলেই সর্বনাশ! বদলে এই ৫ পানীয়তে চুমুক দিলে বদলে যাবে শরীরের হালহকিকত

*স্তনবৃন্ত থেকে তরল নির্গমন: কখনও স্বচ্ছ, আবার অনেক সময় রক্তমিশ্রিত তরল বার হওয়া ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।

*বুকে বা পার্শ্ববর্তী অংশে ফুলে যাওয়া বা ব্যথা: পুরুষের শরীরে ক্যানসারের বিষ ছড়ালে বুকে না পাশের অংশে ফুলে যায় বা ব্যথা হতে পারে। 

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই লক্ষণগুলো ছোটখাটো সমস্যার মতো মনে হলেও এগুলো উপেক্ষা করা বিপজ্জনক।


কাদের বেশি ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। মোট ক্যানসারের মাত্র ০.৫% থেকে ১%। তবুও কিছু নির্দিষ্ট কারণে ঝুঁকি বাড়তে পারে। যেমন-

*পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কারও স্তন ক্যানসার থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

*জিনগত পরিবর্তন: মহিলাদের মতো পুরুষদেরও এই জিন মিউটেশনের কারণে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে।

*হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে বা টেস্টোস্টেরন কমে গেলে ঝুঁকি বাড়ে।

*ওজন বেশি এবং লিভারের সমস্যা: স্থূলতা ও যকৃতের রোগ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। 

*তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শ: অতীতে বুকে রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়া থাকলে ক্যানসারের  আশঙ্কা বাড়তে পারে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সেটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। সমস্যা হল, অনেকে দেরিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসার ধরন মহিলাদের মতোই। অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ও হরমোন থেরাপি প্রয়োগ করা হয় রোগের পর্যায় অনুযায়ী। নিয়মিত কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন-

প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন বা বুকের অংশে গাঁট বা অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।

কোনও পরিবর্তন টের পেলে দেরি না করে চিকিৎসককে দেখান।

যাদের পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো উচিত।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।