একেবারে সুস্থসবল, ছিল না কোনও শারীরিক অসুস্থতা। আচমকা কয়েক দিন আগে বাড়িতে টিভি দেখতে দেখতে অস্বস্তিবোধ করেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী মল্লিক। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় ব্রেক স্ট্রোকে আক্রান্ত তিনি। আপাতত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি মাইল্ড ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলও। শুধু সায়ন্তনী কিংবা অগ্নিমিত্রা নন, শরীরে তেমন কোনও সমস্যা না থাকলেও আচমকা ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আজকাল আকছার শোনা যায়। কয়েক বছর আগেও সাধারণত বয়স ৬০-এর কাছাকাছি না পৌঁছলে ব্রেন স্ট্রোকের প্রকোপ খুব একটা দেখা যেত না। এখন কমবয়সিদের জন্যও প্রাণঘাতীও হয়ে উঠছে এই অসুখ৷ 

কেন বাড়ছে স্ট্রোকের প্রকোপ 

•    এমনিতেই হাই প্রেশার প্রেশার, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বেশি থাকলে কিংবা হার্টের সমস্যায় ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ইদানীং অল্প বয়সেই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে এই সব ক্রনিক রোগ বাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। 


•    কমবয়সিদের অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান, মদ্যপান, নানা রকম মাদকের নেশা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

•    তরুণ-তরুণীদের শরীরে কোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা করার প্রবণতা রয়েছে। নিজের প্রতি সচেতনতার অভাব স্ট্রোকের বিপদ ডেকে আনছে।

•    শরীরে কোনও প্রদাহ বা ইনফেকশন থেকেও স্ট্রোক হতে পারে।

•    ছোট বয়স থেকে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ অল্প বয়সে স্ট্রোকের অন্যতম কারণ।

•    জিনগত কারণেও কমবয়সিদের মধ্যে হতে পারে স্ট্রোক।

•    ওজন বেশি থাকলে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

•    স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে বেশি ফাস্ট ফুড খাওয়া ব্রেন স্ট্রোকের কারণ। 

•    গর্ভনিরোধক কিংবা হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখার ওষুধ খেলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকে।

•    কাজের চাপে হোক কিংবা অলসতায় কমবয়সিদের মধ্যে ‘বডি মুভমেন্ট’ কমে গিয়েছে। যা অল্প বয়সে স্ট্রোক ডেকে আনছে। 

•    যার প্রচন্ড নাক ডাকেন অর্থাৎ যাঁদের অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া রয়েছে তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

•    পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

•    শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি কিংবা অপুষ্টির কারণে স্ট্রোক হতে পারে।


লক্ষণ চেনাবে ছয় অক্ষর

স্ট্রোকের লক্ষণ চেনা অত্যন্ত জরুরি। কারণ লক্ষণ দেখে যতক্ষণে চিকিৎসা শুরু করা হবে তার উপরই নির্ভর করে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা। রোগী তো বটেই, সঙ্গে তাঁর আশেপাশের মানুষদের স্ট্রোকের লক্ষণ বুঝতে হবে। প্রথমেই যে সব লক্ষণ দেখে সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন তা বোঝার জন্য ৬টি ইংরেজি অক্ষরকে পাশাপাশি বসিয়ে শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে। যা হল ‘বি’, ‘ই’, ‘এফ’, ‘এ’, ‘এস’ এবং ‘টি’। একসঙ্গে বললে হয় ‘বি ফাস্ট’। যার বাংলা মানে দাঁড়ায় ‘দ্রুত করো’। আর এই ছয়টি অক্ষরের অর্থ জানা জরুরি। 


*বি মানে ভারমাস্যঃ অর্থাৎ হঠাৎ যদি কেউ শরীরের ভারমাস্য হারিয়ে ফেলেন তাহলে স্ট্রোকের কথা মাথায় রাখতে হবে। 

*আই মানে দৃষ্টিশক্তিঃ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে চোখে একসঙ্গে দুটো জিনিস দেখতে পান কিংবা চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। 

*এফ মানে ফেসঃ যাঁর স্ট্রোক হচ্ছে, তাঁর মুখ বেঁকে যায়। মুখের একটি অংশ ঝুলে যেতে পারে,মুখের কোনও এক দিক স্থির থাকে।   

*এ মানে আর্মঃ শরীরে একদিকের হাত অসাড় লাগা, হাতে জোর হারিয়ে যাওয়া, হাতের মতো পা নড়াচড়া করতে না পারা স্ট্রোকের সম্ভাব্য লক্ষণ। 

*এস মানে স্পিচঃ স্ট্রোক হলে কথা জড়িয়ে যায়। সঠিক শব্দ বেছে কথা বলতে অসুবিধা হয়। 

*টি মানে টাইমঃ উপরের যে কোনও একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সঠিক সময়ের মধ্যে স্ট্রোক চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

অন্যান্য উপসর্গ 

হঠাৎ তীব্র মাথাযন্ত্রণা তবে সাধারণ যন্ত্রণা নয়, মনে হতে পারে যেন মাথা ছিঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ঘাড়ে যন্ত্রণা, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া প্রাথমিক স্তরের স্ট্রোকের এই লক্ষণগুলোও দেখা দিতে পারে।