চিকিৎসাজগতে এমন অনেক রোগ আছে, যেগুলো সম্পর্কে কেবল সাধারণ মানুষই নয়, চিকিৎসকদেরও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। তেমনই বিরল রোগে আক্রান্ত হার্লি নামের  এক শিশু। সে বিশ্বের একমাত্র মেয়ে যার এই রোগ আছে এবং সে তার জীবনের জন্য লড়াই করে চলেছে। ৩ বছরে হয়েছে ৩৮টি অস্ত্রোপচার, তবুও তার বেঁচে থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই। 

দেখতে অন্য বাচ্চাদের মতোই নিষ্পাপ হার্লি, কিন্তু তাঁর জীবনের গল্প শোনলে চোখ ভিজে যাবে আপনার। ব্রিটেনে বসবাসকারী এই ছোট্ট মেয়েটি এমন এক বিরল রোগে আক্রান্ত, যার কোনও চিকিৎসা এখনও বিশ্বের কোথাও নেই। চিকিৎসকদের মতে, হার্লি পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যাঁর শরীরে এই রোগ শনাক্ত হয়েছে। আর দুঃখের বিষয়, তাঁর হাতে জীবনের সময় বাকি মাত্র কয়েক মাস।

হার্লির মা স্টেসি হ্যামন্ড জানান, গর্ভাবস্থার সময় ৩৬ সপ্তাহে স্ক্যান করার সময়ই প্রথম বুঝতে পারেন কিছু একটা সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকেরা শিশুর বুকে এক 'অদ্ভুত ছায়া'দেখতে পান এবং জরুরি অপারেশন করানো হয়। জন্মের পরই হার্লির ফুসফুসে তরল জমতে শুরু করে, খুদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় একরত্তির হাসপাতাল জীবন।

গত তিন বছরে হার্লির শরীরে মোট ৩৮টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। প্রতিবারই চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছেন তাঁর ফুসফুস থেকে তরল সরিয়ে দিতে, কিন্তু সমস্যা বারবার ফিরে এসেছে। তাঁর দেহে একসঙ্গে দেখা দিয়েছে কয়েকটি দুর্লভ অসুখ লিম্ফ্যাঞ্জিওলিওমায়োমাটোসিস (এলএএম), চাইলোথোরাক্স, ও কঙ্কাল ডিসপ্লাসিয়া। এই তিনটির মিলিত প্রভাবে তাঁর শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে, আর চিকিৎসকেরা বলেছেন, 'এই সংমিশ্রণ আগে কখনো দেখা যায়নি।'

বর্তমানে হার্লির বুকে একটি বিশেষ ড্রেন বসানো হয়েছে, যা তরল জমা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখছে, কিন্তু সেটির কার্যকারিতা আর বেশিদিন থাকবে না। ডাক্তারদের অনুমান, কয়েক মাসের মধ্যেই শিশুটি হয়তো আর লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে না।

তবুও এই ছোট্ট মেয়েটির মনোবল অবিশ্বাস্য। শারীরিক যন্ত্রণার মাঝেও সে হাসিমুখে সময় কাটায় পরিবারের সঙ্গে। হার্লির বাবা-মা এখন তার জন্য স্মৃতি তৈরি করতে চান। তাকে  ডিজনিল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, যাতে জীবনের শেষ সময়টুকু হাসিখুশিতে ভরে ওঠে।তাঁরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর হার্লির অঙ্গ দান করা হবে গবেষণার কাজে, যাতে ভবিষ্যতে এই ভয়ানক রোগের চিকিৎসা আবিষ্কারে সহায়তা হয়।