আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেম ভাঙার শব্দ হয় না, কিন্তু তার কম্পন থেকে যায় অনেক দিন। সেই কম্পনেরই এক দৃশ্যমান রূপ যেন প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার দেওয়া উপহার। আলমারির এক কোণে পড়ে থাকা সেই পারফিউমের শিশি, বুকশেলফে রাখা প্রিয় লেখকের বই অথবা অফিসের ডেস্কে আজও সময় দেখিয়ে চলা ঘড়িটা- এইসব স্মারকচিহ্ন কি শুধুই অতীতকে মনে করিয়ে দেওয়ার যন্ত্রণা? নাকি জীবনের এক সুন্দর অধ্যায়ের স্মৃতি? এই প্রশ্ন যেন এক চিরকালীন উভয়সংকট।

সম্পর্ক যখন থাকে, তখন উপহার দেওয়া-নেওয়া তার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু বিচ্ছেদের পর সেই উপহারগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে তৈরি হয় মানসিক টানাপোড়েন। এক পক্ষ মনে করেন, যে সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছে, তার কোনও স্মৃতিচিহ্নই আর বয়ে বেড়ানো উচিত নয়। এই ধারণায় যাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁদের মতে, ব্রেকআপের পর বেশ কিছুদিন খুব কষ্ট হয়। প্রাক্তন দেওয়া সমস্ত জিনিস চোখের সামনে দেখতে পেয়ে আরও কষ্ট হয়। সেই সব জড়ো করে তাই প্রক্তনকে ফেরত দিয়ে দেওয়াই বিধেয়। তাঁদের মতে, অতীতকে বিদায় জানানোর জন্য এটা জরুরি। অনেকেই মনে করেন, প্রাক্তনের দেওয়া উপহার নতুন করে জীবন শুরু করার পথে এক বড় বাধা। এগুলি প্রতিনিয়ত পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা মানসিক ভাবে এগিয়ে যেতে দেয় না। শুধু তাই নয়, নতুন কোনও সম্পর্কে জড়ালে এই উপহারগুলি বর্তমান সঙ্গীর সঙ্গেও জটিলতা তৈরি করতে পারে।

 

তবে মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, উপহার মানে শুধু একজন ব্যক্তি নন, তা জীবনের একটি বিশেষ সময়ের প্রতিচ্ছবি। সম্পর্কটা হয়তো তিক্ততার সঙ্গে শেষ হয়েছে, কিন্তু তার আগের মুহূর্তগুলো তো সুন্দর ছিল। এক প্রখ্যাত লেখক নিজের গল্প লিখেছিলেন, “প্রথম প্রেমিকার দেওয়া একটা টেলিস্কোপ এখনও আমার কাছে আছে। সম্পর্কটা নেই, কিন্তু ওই টেলিস্কোপটা আমাকে আমার ছোটবেলার আকাশ দেখার নেশার কথা মনে পড়ায়। ওটা ফেলে দেওয়ার কথা আমি ভাবতে পারি না।” তাঁর মতো যাঁরা উপহার রেখে দেওয়ার পক্ষে, তাঁদের যুক্তি হল- একটি সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া মানে জীবনের সেই অধ্যায়টাকে মুছে ফেলা নয়। উপহারগুলি সেই সময়ের সাক্ষী। যদি সেই উপহারটি দামি বা খুব প্রয়োজনীয় হয়, তবে আবেগ সরিয়ে রেখে তার ব্যবহারিক দিকটাও ভাবা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।

 

এই বিষয়ে মনোবিজ্ঞান কী বলছে? কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা পত্রে লেখা হয়েছে, “এর কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মানসিক অবস্থা এবং সম্পর্কের ধরনের ওপর।” সেখানে আরও যোগ করা হয়েছে, “আপনাকে নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে- ওই উপহারটি কি আপনাকে আনন্দ দিচ্ছে, নাকি যন্ত্রণা? যদি সেটি আপনার মনে একরাশ তিক্ততা ফিরিয়ে আনে, তবে তা সরিয়ে ফেলাই শ্রেয়। কিন্তু যদি আপনি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে সেটিকে জীবনের একটি সুন্দর স্মৃতি হিসেবে দেখতে পারেন, তবে তা রেখে দিতে কোনও সমস্যা নেই।” গবেষকদের পরামর্শ, যদি সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়, তবে কিছুদিন জিনিসগুলি বাক্সবন্দি করে চোখের আড়াল করে রাখা যেতে পারে। সময় অনেক ক্ষত সারিয়ে দেয়। কয়েক মাস বা বছরখানেক পর সেই বাক্স খুললে হয়তো আপনার অনুভূতি অনেকটাই বদলে যাবে।

 

সব মিলিয়ে, প্রাক্তনের উপহার রাখা বা না রাখার সিদ্ধান্ত একান্তই ব্যক্তিগত। জোর করে অতীত ভোলা যায় না, আবার অতীতকে আঁকড়ে ধরে বর্তমানকে অস্বীকার করাও যায় না। উপহারটি যদি আপনার বর্তমান জীবনে কাঁটার মতো বিঁধে থাকে, তবে তাকে বিদায় জানানোই বুদ্ধিমানের কাজ। আর যদি তা এক টুকরো সুন্দর স্মৃতি হয়ে আপনার এগিয়ে চলার পথে শক্তি জোগায়, তবে তাকে সযত্নে রেখে দেওয়ায় ক্ষতি কী? আসল কথা হল, আপনার মানসিক শান্তি- যা যে কোনও উপহারের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।