আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্তমানে চাকরির দুনিয়ায় বেতন নিয়ে দর কষাকষি অনেক সময়ই বেশ জটিল আকার ধারণ করে। কিন্তু সম্প্রতি এক সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মাত্র ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি এমন এক ঘটনাক্রমের জন্ম দিল, যার পরিণতিতে তাঁর দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেই নিজেদের চাকরি খোয়াতে হল। ঘটনার কথা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন ওই ইঞ্জিনিয়ার নিজেই।
ঘটনার সূত্রপাত এক নামী তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায়। ওই ইঞ্জিনিয়ার সেখানে গত ছয় বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। ড্রপবক্সের ডেটা সিঙ্ক্রোনাইজেশনের মতো সংস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকএন্ড সিস্টেম তিনি একাই সামলাতেন। কোনও দল ছাড়াই এত বড় দায়িত্ব সামলানোর পরে তিনি জানতে পারেন, অন্যান্য সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় তাঁর বেতন প্রায় ১০ শতাংশ কম। সেই কারণে তিনি অনুরোধ করেন যাতে তাঁর বেতন কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর ম্যানেজারের জায়গায় আসেন এক নতুন ডিরেক্টর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ওই ইঞ্জিনিয়ারকে চেপে ধরেন। তাঁর কাছে নাকি খবর ছিল, ওই কর্মী অফিসের বাঁধাধরা সময়ে কাজ করেন না। সেকারণে কোনও ভাবেই বাড়ানো যাবে না বেতন।
কর্মী সেই কথা স্বীকার করে তার কারণও ব্যাখ্যা করেন। তাঁর সাফ কথা, তাঁর দক্ষতা বেশি, তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ নিয়ে বসে থাকতে হয় না তাঁকে। কিন্তু এর পরের ঘটনা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তাঁর কথায়, আমি সমস্ত কারণ বিস্তারিত জানিয়েছিলাম। কিন্তু তার এক মাস পরেই ডিরেক্টর আমাকে ছাঁটাই করে দেন। তিনি বলেন, “এইচআর সিস্টেমে আমার বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি বা জব অ্যাবান্ডনমেন্ট-এর অভিযোগ উঠেছে।” অবাক হলেও কিছুই করার ছিল না তাঁর। চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি ওই ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তাঁর এক প্রাক্তন সহকর্মীর দেখা হয়। তাঁর থেকেই তিনি জানতে পারেন এর পরের ঘটনা। প্রাক্তন সহকর্মী জানান, এতদিন তিনি একা যে কাজটি করতেন, সেই কাজ সামলানোর জন্য সংস্থাকে নতুন করে ছয়জন কর্মী নিয়োগ করতে হয়েছে। এদিকে, ছাঁটাইয়ের পরেও সংস্থা তাঁকে সেভেরান্স বা বিচ্ছেদকালীন ভাতা দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে একজনের কাজ সামলাতে এখন সাতজনকে বেতন দিচ্ছে কোম্পানি।
ওই ইঞ্জিনিয়ার তাঁর পোস্টে আরও লেখেন, “সবচেয়ে বড় কথা হল, সফটওয়্যারটি আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্রটিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে একাধিক গ্রাহকও হারিয়েছে সংস্থা। বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড়সড় চিড় ধরেছে।”
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
এই পরিণতির রেশ শুধু পণ্যের গুণমানের উপরেই থেমে থাকেনি। যে ডিরেক্টর তাঁকে ছাঁটাই করেছিলেন, এবং যে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) ওই ডিরেক্টরকে নিয়োগ করেছিলেন, দু’জনকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এর অন্যতম কারণ? ওই ইঞ্জিনিয়ারকে তাড়ানোর সিদ্ধান্তটি সংস্থার পক্ষে বুমেরাং হয়ে ফিরেছে। সংস্থার সময়, অর্থ এবং সুনাম- তিনই নষ্ট হয়েছে তাতে।
সবশেষে তিনি লেখেন, “মাত্র শতাংশ বেতন বাড়িয়ে দিলেই এই গোটা পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো যেত…”
ঘটনার এই পরিণতিতে তিনি যে বেশ মজাই পেয়েছেন, তা গোপন করেননি। তাঁর কথায়, “যাই হোক, এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে পৃথিবীতে এখনও কিছুটা ন্যায়বিচার অবশিষ্ট আছে।” সার্বিক ভাবে পোস্টটি দেখে সহমত পোষণ করেছেন নেটিজেনদের একটি বড় অংশ। তাঁদের কথায়, “যাঁরা দক্ষতার বদলে আনুগত্যকে বেশি প্রশ্রয় দেন, তাঁদের সঙ্গে এমনই হওয়া উচিত।”
