আজকাল ওয়েবডেস্ক: অফিস মানে শুধু কাজ নয়— মানসিক চাপ, অগণিত ডেডলাইন, টিম মিটিং, টার্গেট পূরণের চাপ, আর তার সাথে ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য। আধুনিক কর্মজীবনে ‘স্ট্রেস’ যেন একটি স্বাভাবিক শব্দ হয়ে উঠেছে। এই চাপ কমানোর জন্য কেউ সিগারেট খান, কেউ ভেপ টানেন, কেউ আবার কফির জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী ও নারী অধিকার কর্মী নাদিয়া বোকোডি বেছে নিয়েছেন সম্পূর্ণ আলাদা এক পথ— হস্তমৈথুন বিরতি।
বিষয়টি প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কানাডিয়ান সিটকম Workin' Moms–এর এক জনপ্রিয় পর্বে চরিত্র জেনি ম্যাথিউসকে দেখা গিয়েছিল অফিসের কাজের ফাঁকে হস্তমৈথুন করতে। দর্শকরা তখন সেটিকে নিছক কমেডি হিসেবে নিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল, এটা কেবল সিটকমের হাস্যরস, বাস্তবে যার কোনো মিল নেই। কিন্তু নাদিয়া বোকোডি দেখালেন, এটি নিছক কল্পনা নয়, বরং অনেকের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে নাদিয়া জানান, তাঁর সহকর্মীরা যখন কেউ সিগারেট টানছেন, কেউ ভেপের ধোঁয়ায় ডুবে আছেন বা কেউ কফি আনতে সারি দিয়েছেন, তিনি তখন অন্যরকম এক বিরতিতে যান। নাদিয়ার ভাষায়, তিনি তখন "রাবিং ইট আউট"-এ ব্যস্ত।
লাঞ্চ ব্রেকের সময় তিনি কখনো নিজের বাসায় ফিরে যান, যা অফিস থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সেখানে গিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য নিজের ভাইব্রেটরের সাহায্য নেন। আবার কখনো অফিসের রেস্টরুমকেই ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, এতে তিনি সতেজ হয়ে ওঠেন, এবং পরবর্তী কাজের চাপ সামলানো অনেক সহজ হয়ে যায়।
নাদিয়ার দাবি, হস্তমৈথুন কেবল ব্যক্তিগত আনন্দের বিষয় নয়, এর বৈজ্ঞানিক দিকও রয়েছে। হস্তমৈথুনের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্দিষ্ট হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। নাদিয়ার মতে, এটি অকারণে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করার মতো সময় নষ্ট নয়, আবার ভাজা-পোড়া বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার মতো ক্ষতিকরও নয়। বরং এটি মন এবং শরীর উভয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর।
চমকে দেওয়ার মতো তথ্য শেয়ার করেন নাদিয়া। তাঁর মতে, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মী ইতিমধ্যেই কর্মক্ষেত্রে হস্তমৈথুন করেন। সংখ্যাটি অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, যৌনতা নিয়ে সমাজে এখনো এক ধরনের দ্বৈত মানসিকতা বিরাজ করছে। যেখানে গোপনে অনেকেই এই অভ্যাসে লিপ্ত, প্রকাশ্যে বিষয়টি এখনো ট্যাবু।
নাদিয়ার মতে, যৌনতা নিয়ে দ্বৈত মানদণ্ড আজও বিদ্যমান। পুরুষদের যৌন আকাঙ্ক্ষা সামাজিকভাবে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে গ্রহণ করা হলেও, নারীরা যখন খোলাখুলি যৌনতা নিয়ে কথা বলেন বা প্রকাশ করেন, তখন তাঁদের ‘স্লাট-শেমড’ হতে হয়।
ইনস্টাগ্রামে নাদিয়া লিখেছিলেন—
“আমি প্রায় সবসময়ই সেক্স নিয়ে ভাবি। কিন্তু আমি এখনো এমন এক পৃথিবীতে বাস করি যেখানে একজন নারী সেক্স নিয়ে খোলাখুলি বললে তাঁকে লজ্জা দেওয়া হয়। অথচ সেক্স আনন্দদায়ক, স্বাস্থ্যকর এবং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এটি নারী বা পুরুষ— উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।”
তিনি আরও প্রশ্ন করেন, “নারীরা কতবার শুধুমাত্র খোলামেলা যৌনাচরণ প্রকাশ করার কারণে অপমানিত হয়েছেন? আর পুরুষেরা— আপনারা কি কখনো তা প্রত্যক্ষ করেছেন? হস্তক্ষেপ করেছেন?”
নাদিয়ার বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে হস্তমৈথুন করা অনৈতিক, এটি পেশাগত শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। আবার অন্যপক্ষের দাবি, এটি ব্যক্তিগত বিষয়, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য কাউকে বিব্রত না করছে, ততক্ষণ এটি সম্পূর্ণ বৈধ ও স্বাস্থ্যকর একটি কাজ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে মানসিক চাপ এবং ‘বার্নআউট’ একটি বাস্তব সমস্যা। অনেক কর্মী এই চাপ সামলাতে মদ্যপান, ধূমপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইনের মতো ক্ষতিকর অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে নাদিয়ার পথ স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবেই দেখা যেতে পারে।
নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে নাদিয়ার উদ্যোগকে অনেকেই সাহসী বলে মনে করেন। কারণ, তিনি এমন এক বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন যা নিয়ে নারীদের চুপ থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়। তাঁর বক্তব্য আসলে যৌন স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধিকারের দাবি।
এখানে প্রশ্ন ওঠে— কেন একজন নারীকে নিজের আনন্দ প্রকাশের জন্য সমাজে জবাবদিহি করতে হবে? কেন একজন নারী যৌনতা নিয়ে খোলামেলা বললেই তাঁকে ‘অশ্লীল’ বলা হয়? নাদিয়ার মতো কণ্ঠস্বর এই সামাজিক ভণ্ডামিকে চ্যালেঞ্জ করছে।
নাদিয়া বোকোডির বক্তব্য হয়তো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকেই এটিকে অস্বস্তিকর বা অশোভন ভাবতে পারেন। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট— তিনি যৌনতা নিয়ে প্রচলিত ট্যাবু ভাঙার সাহস দেখিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো বিতর্ক সৃষ্টি করবে, কিন্তু আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে।
অফিসের কোলাহল, ডেডলাইন আর অবিরাম চাপের এই যুগে প্রশ্নটা দাঁড়ায়— আমরা কি এখনো যৌনতাকে আড়ালে রেখে যাব, নাকি এটিকে মানসিক স্বাস্থ্যের একটি স্বাভাবিক উপাদান হিসেবে গ্রহণ করব?
