বড়দিন এবং সান্টা ক্লজ, এই দুই যেন সমার্থক। দেশ হোক বা বিদেশ, বিশ্বের গোটা প্রান্তেই শিশুরা বিশ্বাস করে বা তাদের বলা,বোঝানো হয়, ক্রিসমাসের আগের মধ্যরাতে লাল পোশাক, টুপি, জুতো পরে, স্লেজ গাড়িতে চেপে, উপহারের ঝোলা কাঁধে ঘুরে বেড়ান সান্টা ক্লজ। দেন উপহার। সান্টা ক্লজ বললেই চোখের সামনে সাদা চুল, দাড়ি, ভ্রুযুক্ত এক বৃদ্ধের অবয়ব ভাসে, যার পরনে লাল পোশাক, কাঁধে লাল ঝোলা। মাথায় লাল টুপি। কিন্তু জানেন কি চিরকাল সান্টার সাজ এমন ছিল না?
১৯০০ সালের গোড়ার দিক পর্যন্তও সেন্ট নিক এবং ফাদার ক্রিসমাস ওরফে সান্টা ক্লজকে আর্থি টোনের পোশাকে দেখানো হতো। অর্থাৎ সবুজ বা খয়েরি রঙের পোশাকে কল্পনা করা হতো। তেমন একাধিক প্রাচীন ছবিও দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেই রূপ সম্পূর্ণ বদলে যায় ১৯৩১ সালে। এরপর সান্টা বলতেই সেই লাল পোশাক পরা বৃদ্ধের ছবি যেন সকলের মাথায় গেঁথে বসে যায়। আর এসবের নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে এক দারুণ মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
এক জনপ্রিয় বহুজাতিক পানীয় সংস্থার বিজ্ঞাপনের হাত ধরেই বদলে গিয়েছিল সান্টা ক্লজের রূপ। এই সংস্থার তরফে শিল্পী হ্যাডন সান্ডব্লুমকে নিয়োগ করা হয় তাঁদের নতুন ছুটির বিজ্ঞাপনের জন্য একটা নতুন নির্দিষ্ট রূপ তৈরি করে দেওয়ার জন্য। তখন তিনিই হাসি, খুশি, প্রাণবন্ত এক বৃদ্ধের ছবি তৈরি করলেন, যার পরনে লাল পোশাক, এই পানীয় সংস্থার বোতলের রঙের সঙ্গে রং মিলিয়ে। আর সেই বিজ্ঞাপন ঠিক কতটা জনপ্রিয় হয়েছিল বা সাড়া ফেলেছিল সেটা নিশ্চয় অনুমান করা যাচ্ছে?
কিন্তু কার অনুকরণে তৈরি করা হয় সান্টা ক্লজ বা ফাদার ক্রিসমাসকে? মনে করা হয় সেন্ট নিকোলাসের অনুকরণে বর্তমান সময়ের সান্টাকে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি ৪ শতকের একজন গ্রিক বিশপ ছিলেন। ছোট শিশুদের ভীষণ স্নেহ করতেন। সান্টা যে স্লেজ গাড়ি চড়ে আসে, তার সব রেনডিয়ারের নাম কিন্তু রুডলফ নয়। বাকিদের নাম ড্যাশের, ড্যান্সার, প্রাণির, ভিক্সেন, কমেট, কিউপিড, ডণ্ডের এবং ব্লিটজেন। এই সাত রেনডিয়ারের টানা স্লেজে চেপেই তিনি আলোকের থেকেও দ্রুত গতিতে বড়দিনের আগের রাতে গোটা পৃথিবী ছুটে বেড়ান সমস্ত শিশুদের উপহার দিতে।
সান্টা ক্লজের প্রথম পাবলিক প্রদর্শন বা প্যারেড ১৮২০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপরই এই চরিত্র আমেরিকান ক্রিসমাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে, গোটা বিশ্বে।
