আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুলিশের ভাষায় এটি ছিল এমন এক ঘটনা, যা “বিশ্বের প্রতিটি পুরুষের শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত বইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।” স্বামীর অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে স্ত্রীর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। তার পর তিনি যা করেছিলেন, তা ইতিহাসের পাতায় থেকে গিয়েছে। ফ্রিজের আবছা আলোয় রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে সেদিন স্বামীর গোটা পুরুষাঙ্গটাই কেটে নিয়েছিলেন লোরেনা ববিট।
ভোর পাঁচটায় স্বামী জন ওয়েন ববিট যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে পৌঁছন, তখন তাঁর অবস্থা দেখে চিকিৎসাকর্মীরা হতবাক হয়ে যান। দু’হাত দিয়ে কোনওক্রমে শরীরের নিম্নাংশ চেপে ধরে আছেন তিনি, তবু রক্ত থামছে না কিছুতেই।
সেখানে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিক সেসিল ডিনের সাক্ষ্য অনুযায়ী, “জনের যেখানে পুরুষাঙ্গ থাকার কথা, সেখানে কেবল অণ্ডকোষ ঝুলছিল বাকিটা লাল মাংসপিণ্ড ছাড়া আর কিচ্ছু ছিল না। দেখে মনে হচ্ছিল যেন নিখুঁত, সমানভাবে এক পোঁচেই তাঁর পুরুষাঙ্গ কাটা হয়েছে।” ঘটনাক্রমে সেদিন ঘটনাস্থল থেকে জনের সেই বিচ্ছিন্ন পুরুষাঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু পুলিশকর্মীরা তা স্পর্শ করতেও অস্বীকার করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেটি হাসপাতালে আনার পর শল্যচিকিৎসক জেমস সেন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জনের মূত্রত্যাগের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছিলেন।
চিকিৎসকের মতে এই ঘটনাটি ছিল এক ধরনের ‘সতর্কবার্তা’। তিনি আরও যোগ করেন, “এই ঘটনা বিশ্বের প্রত্যেক পুরুষের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।”
কিন্তু এই ভাবে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেললেও স্ত্রী লোরেনাকে কিন্তু খলনায়িকা বানানো হয়নি। বরং তিনি বহু মানুষের শ্রদ্ধার পাত্রী হয়ে ওঠেন। এমনকী
সেই সময় বিখ্যাত ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ পত্রিকায় দু’টি পৃষ্ঠা জুড়ে তাঁর কথা ছাপা হয়। সম্প্রতি তিনি নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে সেদিনের কাহিনি তুলে ধরে একটি তথ্যচিত্রও প্রযোজনা করেছেন। তথ্যচিত্রটি দেখা যাবে আমাজন প্রাইমে।
লোরেনা এখন লোরেনা গ্যালো নামে পরিচিত। ঘটনার সময় তাঁর বয়স তখন ছিল মাত্র ২৪। আদালতের রায় অনুযায়ী, বহু দিন ধরে চলা গার্হস্থ্য হিংসার ফলস্বরূপ তিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। তাও আবার আত্মরক্ষার তাগিদে।
লোরেনা মাত্র ১৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য আমেরিকায় আসেন। সেই সময় জনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। জন দেখতে সুদর্শন এবং যথেষ্ট সুবেশী ছিলেন। লোরেনাকে জানান, সেই সময় তাঁর ইংরেজি খুব একটা ভাল ছিল না। সেই সুযোগ কাজে লাগান জন। ইংরেজি শেখানোর অছিলায় আলাপ জমান। কিছু দিন প্রেম করার পর তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের সময় লোরেনার বয়স ছিল ২১ এবং জনের ২৬। লোরেনার অভিযোগ, বিয়ের এক মাসের মধ্যেই বদলে যান জন। মাসখানেক পর থেকেই তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয়।
১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরপর দু'দিন পুলিশ ডাকেন লোরেনা। জনের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করার অভিযোগ দায়ের করেন। পাল্টা জন অভিযোগ করেন যে লোরেনা তাঁর গোপনাঙ্গে লাথি মেরেছেন। দু’টি মামলাই খারিজ হয়ে যায়।

এরপর লোরেনা একটি টেপ রেকর্ডার কিনে জনের অত্যাচারের প্রমাণ জোগাড় করতে শুরু করেন, যাতে তিনি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করতে পারেন। কিন্তু জন সেই যন্ত্রটি খুঁজে পান এবং লোরেনার কথায়, এরপরই তাঁর উপর চড়াও হন জন। জন টেপ নিয়ে ঝগড়ার কথা স্বীকার করলেও, লোরেনাকে আক্রমণ বা ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন।
লোরেনা বলেন, “এর পরের যেটুকু মনে আছে, ও আমার উপর চেপে বসেছিল। আমি বলেছিলাম, 'না, আমার উপর থেকে ওঠো। আমি যৌন মিলন করতে চাই না।’ কিন্তু ও আমার উপর থেকে সরেনি। আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম... তারপর ও আমার অন্তর্বাস ছিঁড়ে ফেলে।” লোরেনার অভিযোগ, এরপর জন তাঁকে ধর্ষণ করেন।
এর পরই জল খাওয়ার ছল করে রান্নাঘরে যান লোরেনা। রান্নাঘর থেকে ফিরে আসেন ছুরি হাতে। চাদর তুলে এক কোপে কেটে ফেলেন জনের পুরুষাঙ্গ।
