আজকাল ওয়েবডেস্ক: এ যেন আক্ষরিক অর্থেই মহাবিশ্বের প্রাচীনতম প্রহেলিকা। মহাবিশ্বের বুকে লুকিয়ে থাকা অগুন্তি রহস্যের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে অদ্ভুত হল আদিম কৃষ্ণগহ্বর বা ‘প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল’। সাধারণ ব্ল্যাক হোলের মতো কোনও নক্ষত্রের মৃত্যুর পর এদের জন্ম হয় না। বিজ্ঞানীদের মতে, এদের সৃষ্টি হয়েছিল মহা বিস্ফোরণের (বিগ ব্যাং) ঠিক পরের মুহূর্তে। সেই সময়ে মহাশূন্য এতটাই ঘন সন্নিবিষ্ট ছিল যে, কিছু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অঞ্চল নিজের বিপুল ঘনত্বের ভারেই সংকুচিত হয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।

গ্রহ বা নক্ষত্রের সঙ্গে এদের কোনও তুলনা চলে না। কিছু আদিম ব্ল্যাক হোল আয়তনে একটি পরমাণুর চেয়েও ছোট হতে পারে, অথচ তাদের ভর হতে পারে একটি আস্ত পর্বতের চেয়েও বেশি। আবার কিছু ব্ল্যাক হোলের আকার হয়তো একটি ফুটবলের মতো। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এদের অস্বাভাবিক আকার এবং ঘনত্বের কারণেই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা রহস্যময় ডার্ক ম্যাটারের একটি বড় অংশ হয়তো এই আদিম ব্ল্যাক হোল দিয়েই গঠিত।

কেন এত স্বতন্ত্র এই ব্ল্যাক হোল?
এদের অনন্যতার প্রধান কারণ হল এদের উৎস। যেখানে সাধারণ ব্ল্যাক হোল তৈরি হয় মৃতপ্রায় নক্ষত্র থেকে, সেখানে প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোলের জন্ম মহাবিশ্বের একেবারে শৈশবে। এদের আরেকটি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হল ক্ষুদ্র শরীরে বিপুল ভর। একটি বালুকণার চেয়েও ছোট আকারের ব্ল্যাক হোলের ভর হতে পারে কয়েকশো কোটি টন।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এরা এতটাই ক্ষুদ্র যে অনায়াসে গ্রহ, পাথর বা এমনকি মানুষের শরীর ভেদ করে চলে যেতে পারে, অথচ কেউ টেরও পাবে না। পিছনে রেখে যায় কেবল আণুবীক্ষণিক ছাপ, তাতে অবশ্য কোনও ক্ষতি হয় না। বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, মহাবিশ্বে যদি এদের সংখ্যা বিপুল পরিমাণ হয়, তবে গ্যালাক্সির গঠন নিয়ন্ত্রণকারী অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটারের রহস্যের সমাধান হতে পারে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
এর ঠিক বিপরীতে রয়েছে নাক্ষত্রিক বা স্টেলার ব্ল্যাক হোল, যাদের শনাক্ত করা অনেক সহজ। কারণ, নক্ষত্রের বিস্ফোরণ থেকে জন্ম নেওয়ায় এরা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে জোরালোভাবে বিক্রিয়া করে। কিন্তু আদিম ব্ল্যাক হোলদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এরা মহাজাগতিক ছায়ামূর্তির মতো নীরবে ব্রহ্মাণ্ডে ভেসে বেড়ায়। কিছু বিজ্ঞানীর মডেল অনুযায়ী, প্রতি দশকে অন্তত একটি করে এমন ব্ল্যাক হোল আমাদের সৌরজগতের মধ্যে দিয়ে পার হয়ে যেতে পারে, যার গতি আমাদের তৈরি করা যে কোনও মহাকাশযানের চেয়েও বেশি।
যদিও এই ধরনের ব্ল্যাক হোল এখনও তাত্ত্বিক স্তরেই রয়েছে, তবে এই ব্ল্যাক হোল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মহাবিশ্বের ঊষালগ্নের অনেক গোপন কথা এখনও আমাদের অজানা। এদের নিয়ে গবেষণা হয়তো ভবিষ্যতে ডার্ক ম্যাটার, গ্যালাক্সির গঠন সম্পর্কেও নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

তথ্যসূত্র: স্তোকোভিচ ও দাই (২০২৪), ফিজিক্স অফ দ্য ডার্ক ইউনিভার্স; নাসা (২০২৪), ডার্ক ম্যাটার অ্যান্ড ব্ল্যাক হোলস; সায়েন্টিফিক আমেরিকান (২০২৪), কুড প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোলস বি পাসিং থ্রু আস?