যার জন্ম হবে তাকে মরতেই হবে, এই ধারণাই রয়েছে পৃথিবীর শুরু থেকে। মানুষকে অমর করার বহু চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কত ওষুধ, কত বিদ্যাই ব্যর্থ হয়েছে। তবে এবার এক অবাক করা তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে নাকি টিকটিক করছে এক অদৃশ্য ঘড়ি, একটি রহস্যময় টাইমার, যা ধীরে ধীরে আমাদের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ঘড়ি বা ‘মৃত্যু-ঘড়ি’ কোষের আয়ু নির্ধারণ করে এবং এটি মানুষের প্রাকৃতিক মৃত্যুর সময়ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

কীভাবে কাজ করে এই মৃত্যু-ঘড়ি? গবেষকদের মতে, এই নতুনভাবে আবিষ্কৃত কোষীয় কাঠামো এক ধরনের ‘মর্টালিটি টাইমার’ হিসেবে কাজ করে। এটি কোষের ভেতরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংকেত পাঠায় যা ঠিক করে দেয় কখন একটি কোষের মৃত্যু হবে বা কখন নতুন কোষ তৈরি হবে না। ফলে এই প্রক্রিয়াই মানবজীবনের আয়ু ও বার্ধক্যের গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুনঃ শুধু মস্তিষ্ক নয়, শরীরের অন্যান্য অংশও ধরে রাখে স্মৃতি! বিরাট চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়

যুগান্তকারী এই আবিষ্কারের পর থেকেই বিজ্ঞান মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে যে যদি এই মৃত্যুঘড়ি থামিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কি মানুষ মৃত্যুকে পিছিয়ে দিতে পারবে? গবেষকরা বলছেন, যদি এই কোষীয় টাইমারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাহলে বয়সজনিত কোষমৃত্যু বন্ধ করা সম্ভব হবে। ফলস্বরূপ, মানুষের জীবনকাল শতবর্ষের গণ্ডি পেরিয়ে বহু শতাব্দী পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

এপ্রসঙ্গে একজন গবেষক জানিয়েছেন, “আমরা যদি কোষের অভ্যন্তরীণ মৃত্যু-ঘড়িকে বুঝতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে তা চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটাবে। বার্ধক্য, ক্যানসার, এমনকী অঙ্গ বিকলতার মতো রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার হতে পারে।” তবে এর বিপদের আশঙ্কাও কম নয়। সকল বিজ্ঞানী এই সম্ভাবনায় আশাবাদী নন। অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন, এই প্রাকৃতিক মৃত্যু-ঘড়িতে হস্তক্ষেপ করলে তার ফল হতে পারে ভয়াবহ।

কোষমৃত্যু বন্ধ করে দেওয়া হলে শরীরে অস্বাভাবিক কোষ জমে গিয়ে ক্যানসার, টিউমার বা জেনেটিক বিকৃতি ঘটতে পারে। এমনকী পুরো শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা এই মৃত্যু-ঘড়ির রহস্য উন্মোচনে কাজ করছেন। তাদের লক্ষ্য, কোষের আয়ু বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপদ উপায়ে মানবজীবন দীর্ঘায়িত করা। যদিও এখনও এটি প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা, তবু অনেকেই বিশ্বাস করছেন, এই আবিষ্কার হয়তো মানব ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যেখানে ‘মৃত্যু’ আর চূড়ান্ত সত্য নাও থাকতে পারে।