স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় এখন চিয়া সিডস যেন অপরিহার্য নাম। স্মুদি, পুডিং, এনার্জি বার, ব্রেকফাস্ট বোল, অনলাইন ‘ক্লিন ইটিং’ রেসিপি খুললেই চোখে পড়ে এই ছোট্ট বীজ। উপকারিতাও কম নয়। ফাইবারে ভরপুর, উদ্ভিজ্জ ওমেগা-৩ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ চিয়া সিডস দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাই ওজন কমানোর জন্য বহু মানুষ নিয়মিত এটি খান। কিন্তু এত উপকারী একটি খাবার কি আদৌ শরীরের ক্ষতি করতে পারে? আশ্চর্য হলেও উত্তর হ্যাঁ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিয়া সিডস হজমে সহায়ক হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে নীরবে নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। পেট ফোলা, পেটব্যথা, এমনকি রক্তচাপ বা ওষুধের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে এই বীজ।

ব্যালান্স নিউট্রিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ নিউট্রিশনিস্ট খ্যাতি রুপানি জানান, সমস্যার মূল চিয়া সিডস নয়, বরং কতটা এবং কীভাবে তা খাওয়া হচ্ছে, সেটাই আসল বিষয়।

অতিরিক্ত চিয়া সিডস খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

হজমের সমস্যা

চিয়া সিডসে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। মার্কিন কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ২৮ গ্রাম চিয়া সিডসেই থাকে ৯ গ্রামের বেশি ফাইবার। ফাইবার অন্ত্রের জন্য উপকারী হলেও হঠাৎ বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমতন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। এর ফলে পেট ফোলা, পেটব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁদের আইবিএস বা পেটের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। দিনে এক-দু’চামচ যথেষ্ট, তার বেশি হলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।

রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে

ডায়াবেটিস কেয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১২ সপ্তাহ নিয়মিত চিয়া সিডস খেলে রক্তচাপ কমতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি ভাল হলেও, যাঁদের স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ কম বা যাঁরা রক্তচাপের ওষুধ খান, তাঁদের মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

ক্যালোরি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি

মাত্র দু’টেবিল চামচ চিয়া সিডসেই থাকে প্রায় ১৩৮ ক্যালোরি। ওজন কমানোর লক্ষ্য থাকলে প্রতিটি খাবারে অযথা চিয়া সিডস যোগ করলে দৈনিক ক্যালোরির সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারেন।

শ্বাসনালিতে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা

এটি তুলনামূলকভাবে কম জানা হলেও গুরুতর সমস্যা। শুকনো চিয়া সিডস জল পেলে দ্রুত ফুলে ওঠে। কিছু গবেষণা ও চিকিৎসা প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, শুকনো চিয়া সিডস খাওয়ার পর তা খাদ্যনালিতে ফুলে গিয়ে আটকে যায় এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, চিয়া সিডস সব সময় ভিজিয়ে খাওয়া উচিত, বিশেষ করে যাঁদের গিলতে অসুবিধা হয়।

অ্যালার্জির সম্ভাবনা

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চিয়া সিডসে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ঠোঁট বা জিভে চুলকানি, বমি, মাথা ঘোরা বা ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিরল হলেও অবহেলা করলে শ্বাসকষ্টের মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

ক্যানসারের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন

চিয়া সিডসে থাকা আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড সাধারণত উপকারী ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। তবে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্যানসার-এ প্রকাশিত ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দীর্ঘদিন অতিরিক্ত আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড গ্রহণের সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসারের একটি সম্ভাব্য সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, চিয়া সিডস ক্যানসার সৃষ্টি করে, তবে দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত গ্রহণ সকলের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।

ওষুধের সঙ্গে প্রভাব

চিয়া সিডস রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসের ওষুধের সঙ্গে একসঙ্গে খেলে রক্তে শর্করা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। এছাড়া ওমেগা-৩ থাকার কারণে এটি প্রাকৃতিক ব্লাড থিনার হিসাবে কাজ করতে পারে, যা রক্তচাপ বা রক্ত পাতলা করার ওষুধের প্রভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। নিয়মিত ওষুধ খেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

চিয়া সিডস নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর, তবে মাত্রা এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে খাওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।