প্লাস্টিক দূষণ এখন কেবল পরিবেশেই সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের শরীরেও ঢুকে পড়ছে। আগেই রক্তে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গিয়েছে। এমনকী মানুষের মস্তিষ্ক, মায়ের গর্ভেও প্রবেশ করেছে বিষাক্ত প্লাস্টিক। আর এবার মানব বীর্যেও মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির প্রমাণ। তবে কি চরম ঝুঁকিতে পড়তে চলেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

সায়েন্স অফ দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা প্রতিটি মানব বীর্যের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, একটিও নমুনা এমন পাওয়া যায়নি যেখানে মাইক্রোপ্লাস্টিক অনুপস্থিত। ৩৬ জন পুরুষের বীর্য বিশ্লেষণ করে ১০০% নমুনায় মাইক্রোস্কোপিক প্লাস্টিকের টুকরো পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিকের যে প্রকারগুলো মিলেছে তা হল পলিস্টাইরিন, পলিথিন এবং পিভিসি, যা সম্ভবত রক্তপ্রবাহে এবং প্রজনন টিস্যুতে যাওয়ার আগে খাবারের বা শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাড়ে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি! কোন কোন নিয়ম মেনে চললে সুস্থ থাকবেন হবু মায়েরা? পরামর্শ দিলেন ডাঃ সর্বজিৎ রায়

গবেষণায় প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করার জন্য কনফোকাল র‍্যামন মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি গবেষকরা ছোট, বাঁকানো, কুণ্ডলীকৃত বা অনিয়মিত আকৃতির অস্বাভাবিক শুক্রাণু কোষ পর্যবেক্ষণ করেছেন। ফলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রজনন বিষাক্ততা সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গবেষকরা মনে করেন, এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমাদের শরীরে প্লাস্টিক দূষণ কতটা গভীরভাবে প্রবেশ করেছে সেটা বীর্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি যে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। 

কেন এটি উদ্বেগজনক? প্লাস্টিক ভেঙে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় পরিণত হলে তা খাবার, জল ও বাতাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। বিগত কয়েক বছরে রক্ত, মল, এমনকী স্তন্যদুগ্ধেও মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে। এবার বীর্যে তার উপস্থিতি ধরা পড়ায় মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বীর্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতিতে প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিক শুক্রাণুর গুণমান এবং পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে পুরুষদের প্রজননের সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। 

স্পেনের আরও এক গবেষণায় মারাত্বক তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মানুষের রক্ত থেকে সরাসরি প্লাস্টিক মিশছে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুতে। মহিলাদের দেহে ৬৯ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে এবং পুরুষদের দেহে ৫৫ শতাংশ। ফলে নতুন যে শিশু তৈরি হয়েছে তার মধ্যে জন্মের আগে থেকেই প্লাস্টিকের কণা থাকছে। পরবর্তীকালে যখন এই শিশু বড় হয়েছে তখন সে দেহে নানা ধরণের রোগ নিয়েই তৈরি হয়েছে। এমনকি সামান্য পরিবেশ বদলের পরই সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। 

গবেষকদের মতে, বিষয়টি অবিলম্বে গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্যের দিকে ঝুঁকলে হয়তো এই বিপদ কিছুটা কমানো সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্লাস্টিক দূষণ কেবল পরিবেশ নয়, আগামী প্রজন্মের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলছে।