আজকাল ওয়েবডেস্ক:  লন্ডনের কিংস ক্রস থেকে শুরু করে টোকিওর পার্ক পর্যন্ত—সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এক নতুন ব্যায়াম পদ্ধতি, নাম জাপানি ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং (Japanese Interval Walking)। সহজ নিয়মে সাজানো এই ব্যায়াম পদ্ধতি ইতিমধ্যেই টিকটকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পদ্ধতিটি হলো—তিন মিনিট দ্রুত হাঁটা, এরপর তিন মিনিট ধীরে হাঁটা। এভাবে ৩০ মিনিট চালিয়ে গেলে তৈরি হয় এক ধরণের ব্যায়ামের ধাপ, যা একদিকে শরীরের উপর কম চাপ সৃষ্টি করে, অন্যদিকে কার্যকরভাবে ক্যালরি পোড়ায় ও ফিটনেস বাড়ায়।

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ক্রিস্টিয়ান কারস্টফট ব্যাখ্যা করেছেন, দ্রুত হাঁটার সময় এমন গতি বজায় রাখতে হবে যাতে লম্বা বাক্যে কথা বলা কঠিন হয়। আর ধীরগতির হাঁটার সময় শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারে। তবে, তিনি মজার ছলে উল্লেখ করেছেন—অনেকের কাছেই আসল চ্যালেঞ্জ হলো ধীর গতিতে হাঁটা!

কার জন্য উপযোগী এই ব্যায়াম?

যারা দৌড়ানোর ফলে হাঁটুর বা জয়েন্টের সমস্যা ভোগেন

মধ্যবয়সী বা বয়স্ক মানুষ যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না

টাইপ–২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী

 

আরও পড়ুন: পুরুষের 'ওইটা' একটু বাঁকা কেন হয়? সামাজিক চাপ না-কি অন্য কিছু?


কারস্টফট ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণায় দেখা গেছে, চার থেকে ছয় মাস নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে শরীরের ফিটনেস ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। শুধু তাই নয়, গড়ে তিন থেকে পাঁচ কেজি ওজনও কমতে পারে, বিশেষত ফ্যাট কমে।

বৈজ্ঞানিক প্রমাণ

২০০০-এর দশকের শুরুতেই জাপানে এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ৬৩ বছর গড় বয়সের ১৩৯ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা সপ্তাহে অন্তত চার দিন পাঁচ মাস ধরে এই ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং করেছেন, তাদের অ্যারোবিক সক্ষমতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হাঁটুর শক্তি—সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। কোপেনহেগেনের এক ক্ষুদ্র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

HIIT-এর বিকল্প

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শন ফিলিপস জানিয়েছেন, ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং আসলে এক ধরণের HIIT (High Intensity Interval Training)। এর সুবিধা হলো, কম সময়ে কম পরিশ্রমে বেশি ফল পাওয়া যায়। তবে যারা আগে একেবারেই ব্যায়াম করেন না, তাদের জন্য সরাসরি ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং শুরু না করে প্রথমে স্বাভাবিক হাঁটা দিয়ে শুরু করাই ভালো।

সবার জন্য সমান নয়

যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে এটি কার্যকরী, তবুও সবাই সমান উৎসাহ নিয়ে এই ব্যায়াম উপভোগ করবেন না। কারও কাছে উচ্চতর গতি বজায় রাখা উপভোগ্য, আবার কারও কাছে তা বিরক্তিকর বা ক্লান্তিকর। ড. ফিলিপস তাই বলেন, “একটা সর্বজনীন ব্যায়াম পদ্ধতি তৈরি করা সম্ভব নয়। মানুষের জন্য যতগুলো বিকল্প সম্ভব তৈরি করতে হবে, যাতে তারা নিজেদের মতো উপযুক্ত ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন।” জাপানি ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড নয়—এটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত এক সহজ, কার্যকরী এবং বয়স্কদের জন্যও নিরাপদ ব্যায়াম পদ্ধতি, যা আগামী দিনে আরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনের পথে এগিয়ে নিতে পারে।