আজকাল ওয়েবডেস্ক: “ফিরিয়ে দিতে পারবেন ২৮ টা বছর?” মনে মনে হয়তো এমনটাই ভাবছিলেন ক্লারেন্স মোজেস। প্রায় তিন দশক ধরে তিনি নরকযন্ত্রণা ভোগ করেছেন, পরিবার বিদ্ধ হয়েছে সামাজিক অপমানে। অথচ তিনি নিজে বারবার বলে গিয়েছেন তিনি নির্দোষ। আইন, আদালত, জুরি - কেউ দাঁড়ায়নি তাঁর পাশে। শেষ পর্যন্ত ২৮ বছর পর নড়ে ওঠে ধর্মের কল। অবশেষে নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পান তিনি।

৬০ বছর বয়সি ক্লারেন্স মোজেস-এল-কে ১৯৮৮ সালে এক প্রতিবেশীকে যৌন নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। আদালত দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে। ৪৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মোজেস-এল বরাবরই দাবি করে এসেছেন যে, তাঁকে ভুল করে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর কথায় কান দেয়নি কেউই। জেলেই কেটে গিয়েছে যৌবন।
আরও পড়ুন: একবার লাগালেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলবে! থ্রি ডি প্রিন্টারে কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা
মুক্তির আশা যখন প্রায় অস্তমিত সেই তখনই প্রকাশ্যে আসে নতুন প্রমাণ। অভিযোগকারিণী মহিলা স্বীকার করেন, বাস্তবে নয়, স্বপ্নে তিনি ধর্ষকের নাম জানতে পারেন। আর সেই স্বপ্নের ভিত্তিতেই সাজা হয় ওই ব্যক্তির। অবশেষে পুনরায় শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া।

আমেরিকার ডেনভারের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এক সপ্তাহব্যাপী শুনানি চলে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী জুরির সদস্যরা চার ঘণ্টা ধরে আলোচনার শেষে নতুন রায় দেন। সরকারি ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যৌন নির্যাতন, শারীরিক নিগ্রহ এবং চুরির মতো গুরুতর যাবতীয় অভিযোগ থেকেই তাঁকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘স্তনদুগ্ধ আইসক্রিম’ খেতে হুড়োহুড়ি বড়দেরও! কত দাম? কোথায় পাওয়া যাবে এই স্বাদ?
প্রসঙ্গত, নিজের মুক্তির জন্য সমস্ত আইনি আবেদনের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মোজেসের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারই জেলখানার এক বন্দির চিঠি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। চিঠিতে ওই বন্দি স্বীকার করে যে, সেই অভিযোগকারী মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল। তাও জোর করে নয়েজ সহমতের ভিত্তিতে। কিন্তু পরে তাঁদের মধ্যে বচসা হওয়ায় তিনি ওই মহিলাকে মারধর করেন।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে সওয়াল করেন, এই নতুন প্রমাণ এবং অভিযোগকারিণীর বারবার বয়ান বদল, দুইয়ের ভিত্তিতে মোজেসের সাজা খারিজ করা উচিত। তাঁরা জানান, অভিযোগকারিণী প্রথমে তিন জন ভিন্ন ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। পরে তিনি সাক্ষ্য দেন যে, স্বপ্নে তিনি মোজেস-এলের নাম জানতে পারেন। শুধু তাই নয়, যে ডিএনএ প্রমাণের মাধ্যমে মোজেস-এল নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারতেন, ডেনভার পুলিশ ভুলবশত তা নষ্ট করে ফেলেছিল বলেও অভিযোগ করেন মোজেসের আইনজীবীরা।
ডেনভার ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক ক্যান্ডেস গার্ডেস এই সমস্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুরোনো রায় বাতিল করার নির্দেশ দেন। বিচারক নিজের রায়ে জানান, “নতুন করে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে মনে হচ্ছে, জুরি সম্ভবত অভিযুক্তকে নির্দোষ বলেই রায় দেবে।” তাঁর সেই কথাই সত্যি প্রমাণিত হয়। ২৮ বছর পর কারামুক্ত হন মোজেস।