আজকাল ওয়েবডেস্ক: খাওয়ার সময়ে অনীহা, পছন্দের খাবার সামনে দেখলেও মুখে তুলতে ইচ্ছে করছে না- এমন অভিজ্ঞতা আমাদের কমবেশি সকলেরই হয়। অতিরিক্ত গরম, মানসিক চাপ বা সাময়িক বদহজমের কারণে এমনটা হতেই পারে। কিন্তু যদি এই ক্ষুধামান্দ্য বা খিদে না পাওয়ার সমস্যা দিনের পর দিন চলতে থাকে, তবে তাকে সাধারণ ক্লান্তি বা মনের অনিচ্ছা ভেবে উড়িয়ে দেওয়া মারাত্মক ভুল হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে বেশ কিছু গুরুতর রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
সাধারণত, আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীর যখন শক্তির প্রয়োজন অনুভব করে, তখন এখান থেকেই সংকেত আসে যে, খিদে পেয়েছে। কিন্তু নানা শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় এই প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হতে পারে। হজমের গোলযোগ, যেমন- অ্যাসিডিটি, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আই বি এস)-এর মতো সমস্যায় খিদে কমে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। আবার জ্বর, সর্দি-কাশির মতো কোনও অস্থায়ী সংক্রমণের সময়েও আমাদের শরীর জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে ব্যস্ত থাকায় ক্ষুধ্যামান্দ্যের শিকার হই আমরা।
আরও পড়ুন: ৩ মিনিটে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে! যুগান্তকারী ‘আঠা’ আবিষ্কার চীনের বিজ্ঞানীদের, বদলে যাবে চিকিৎসাশাস্ত্রের রূপরেখা?
কিন্তু উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন কোনও আপাত কারণ ছাড়াই এই সমস্যা দিনের পর দিন চলতে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, দীর্ঘমেয়াদি এবং অজানা কারণে খিদে কমে যাওয়া বেশ কয়েকটি জটিল রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল লিভার বা যকৃতের সমস্যা। হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার বা সিরোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হলে যকৃতের কার্যক্ষমতা কমে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে হজম এবং ক্ষুধার উপর। একইভাবে, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা বৃক্কের সমস্যায় শরীরে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ জমতে শুরু করে, যা ক্ষুধামান্দ্য এবং বমি বমি ভাবের জন্ম দেয়।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও এর একটি বড় কারণ। বিশেষত, থাইরয়েডের সমস্যা, যেমন- হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের কম ক্ষরণ), শরীরের বিপাকক্রিয়া বা মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয়। ফলে খিদে কমে যায়।
এছাড়া, হৃদযন্ত্র বিকল বা হার্ট ফেলিওরের মতো রোগেও শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হওয়ায় হজমতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যা থেকে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়।
সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হল, ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ক্ষেত্রেও ক্ষুধামান্দ্য এবং ওজন কমে যাওয়া অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ। বিশেষ করে পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলি প্রায়শই দেখা যায়।
শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও ক্ষুধার নিবিড় যোগ রয়েছে। ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি বা তীব্র মানসিক চাপ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে খিদে পাওয়ার অনুভূতিটাই নষ্ট হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বাবা ভাঙ্গা আর নস্ত্রাদামুস দু’জনেই সাবধান করেছিলেন! ২০২৫-এর ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণী শুনে কাঁপছে গোটা বিশ্ব
কখন হবেন সতর্ক?
সামান্য অরুচি হলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
১। যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে একটানা খিদে না থাকে।
২। ক্ষুধামান্দ্যের সঙ্গে দ্রুত ওজন কমতে শুরু করলে।
খাওয়ার ইচ্ছে না থাকার পাশাপাশি অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি হলে।
৩। এর সঙ্গে একটানা জ্বর, পেট ব্যথা, ক্লান্তি বা বমির মতো উপসর্গ থাকলে।
৪। খাবার গিলতে বা হজম করতে অসুবিধা হলে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, খিদে না পাওয়ার কারণ সামান্য বদহজম হোক বা কোনও গুরুতর রোগ, তাকে অবহেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই পারে ভবিষ্যতের বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
