আজকাল ওয়েবডেস্ক: উৎসবের মরশুমে একটু বেশি খাওয়াদাওয়া হয়ে যায়। ফলে শরীরে মেদ জমাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সময় মতো সেই মেদ কমিয়ে ফেলাও দরকার। ওজন ঝরানোর কথা উঠলেই ঘরোয়া টোটকার দিকে ঝোঁকেন অনেকে। এই বিষয়ে এখন বেশ জনপ্রিয় জিরে ভেজানো জল এবং চিয়া বীজ ভেজানো জল। সমাজমাধ্যম থেকে শুরু করে বন্ধুদের আড্ডা, সব জায়গায় এই দুই পানীয় নিয়ে জোরদার চর্চা। কিন্তু প্রশ্ন হল, ওজন কমানোর লড়াইয়ে কে বেশি কার্যকরী? জিরে না চিয়া? এই দুইয়ের গুণাগুণ বিচার করে দেখা যাক।

 

জিরে ভেজানো জলের কেরামতি

রান্নাঘরের এই পরিচিত মশলাটি যে ওজন কমাতেও ওস্তাদ, তা অনেকেই জানেন। জিরের প্রধান কাজ হল হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো এবং মেটাবলিজম বা বিপাক হারকে ত্বরান্বিত করা।

বিপাক হার বৃদ্ধি: জিরেতে থাকা ‘থাইমল’ নামক যৌগটি হজমে সাহায্যকারী উৎসেচকের ক্ষরণ বাড়ায়। ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা কমে। সকালে খালি পেটে জিরে জল খেলে বিপাক হার অনেকটাই বেড়ে যায়, যা সারাদিন ধরে ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।

শরীরকে দূষণমুক্ত করা: জিরে জল একটি চমৎকার ডিটক্স ড্রিঙ্ক। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে এবং পেট ফাঁপা বা গ্যাসের মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।

কম ক্যালোরি: জিরে ভেজানো জলে ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ওজন কমানোর ডায়েটে এটি একটি আদর্শ পানীয়।

কখন খাবেন: সবচেয়ে ভাল ফল পেতে সকালে খালি পেটে হালকা গরম জিরে জল পান করুন।

 

চিয়া বীজের চমক

বিদেশি এই বীজটি এখন ভারতীয়দের রান্নাঘরেও বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া বীজ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে।

ফাইবারের ভান্ডার: চিয়া বীজের সবচেয়ে বড় গুণ হল এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। জলে ভেজানোর পর এটি প্রায় ১০-১২ গুণ ফুলে ওঠে এবং একটি জেলির মতো আস্তরণ তৈরি করে। এই জল পান করলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে, ফলে বারে বারে খিদে পাওয়ার প্রবণতা কমে। এতে স্বাভাবিকভাবেই খাবার কম খাওয়া হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

প্রোটিন ও ওমেগা-৩: চিয়া বীজে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রোটিন পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং ওমেগা-৩ শরীরের প্রদাহ কমাতে কার্যকরী, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: চিয়া বীজ রক্তে শর্করার পরিমাণকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, ফলে হঠাৎ করে মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা কমে যায়।

কখন খাবেন: মূল খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে বা দু’টি বড় ভোজের মধ্যবর্তী সময়ে খিদে পেলে চিয়া বীজের জল খাওয়া যেতে পারে।

 

জিরে জল এবং চিয়া বীজের জল, দুটিই ওজন কমাতে সহায়ক। তবে এদের কার্যকারিতার ধরণ আলাদা।

যদি কারও মূল লক্ষ্য হয় হজম ক্ষমতার উন্নতি এবং মেটাবলিজম বাড়ানো, তবে জিরে জল বেশি কার্যকর। এটি শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে।

অন্যদিকে, যদি কারও মূল সমস্যা হয় অতিরিক্ত খিদে বা অসময়ে খাওয়ার অভ্যাস, তবে চিয়া বীজের জল বেশি উপকারী। এর ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দেবে, যা ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে।

সুতরাং, নিজের শরীরের প্রয়োজন বুঝে যে কোনও একটি বা দু’টিই নিয়ম মেনে খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু এই পানীয়গুলির উপর ভরসা করলেই চলবে না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চাই হল সুস্থভাবে ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি।