খাবারে তেল ব্যবহার স্বাদের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত তেল নীরবে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি তেল খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর চাপ ফেলে এবং নানা গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়েটিশিয়ান ডা. জ্যোতি সিং জানান, নিয়মিত অতিরিক্ত তেল খাওয়া কতটা বিপজ্জনক এবং কীভাবে সহজভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।
চিকিৎসকের মতে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনন্দিন তেলের পরিমাণ ১৫ গ্রাম, অর্থাৎ প্রায় তিন চা-চামচ এর বেশি হওয়া উচিত নয়। তিনি জানান, “এক গ্রাম তেল থেকে প্রায় ৯ কিলোক্যালরি পাওয়া যায়, যা অধিকাংশ মানুষের দৈনন্দিন ক্যালোরির চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি।”
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত তেল গ্রহণের ফলে ফ্যাটি লিভার, ওজন বৃদ্ধি এবং হজমজনিত সমস্যার মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। ডা. সিং বলেন, সুষম পরিমাণে তেল গ্রহণ স্বাস্থ্যকর, এবং সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
চিকিৎসক ট্রান্স ফ্যাট এবং হাইড্রোজেনেটেড তেলের ক্ষতির দিকে লক্ষ্য আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, “এই তেলগুলি অন্ত্র এবং লিভারের জন্য ক্ষতিকর। যারা ভুজিয়া, নোনতা বা ফাস্ট ফুড বেশি খায়, তারা মাত্র একদিনেই এক থেকে আড়াই কিলো পর্যন্ত ওজন বাড়াতে পারে, শুধুমাত্র ট্রান্স ফ্যাটের উচ্চ মাত্রার কারণে।”
ডা. সিং স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে সর্ষের তেল, রাইস অয়েল, ঘি, নারকেল তেল এবং বাদামের তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, এই তেলগুলো শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী, তবে এগুলোও পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, বিশেষ করে বর্ষাকালে অতিরিক্ত তেল গ্রহণ হার্টের সমস্যা, স্থূলতা এবং হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে। ডা. সিংহ ব্যাখ্যা করেছেন যে, তেলের ধরন সঠিকভাবে নির্বাচন করা এবং সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা শরীরকে একাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “পরিমিত তেল ব্যবহার শরীরের চর্বি, লিভার এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে রাখে। সঠিক তেল এবং সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে হার্টের স্বাস্থ্য বজায় থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং হজম প্রক্রিয়া সুস্থ থাকে।”
অতএব খাদ্যাভ্যাসে তেলের ব্যবহার শুধুমাত্র স্বাদ বৃদ্ধি করে তা নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। স্বল্প এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে তেল আমাদের দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি যোগায়, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ধীরে ধীরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং বিভিন্ন জটিলতা যেমন ওজন বৃদ্ধি, হৃদসংক্রান্ত সমস্যা, লিভার এবং হজমসংক্রান্ত অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রতিদিনের খাবারে পরিমিত তেল ব্যবহার, স্বাস্থ্যকর বিকল্প নির্বাচন এবং খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত করে। নিয়মিত স্বাস্থ্যপর্যবেক্ষণ এবং সঠিক পরিমাণে তেল ব্যবহার করে আমরা স্বাভাবিক জীবনধারা বজায় রাখতে পারি এবং শরীরকে দীর্ঘ সময় সুস্থ এবং সজীব রাখতে পারি।
