গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই নানা পরিবর্তন আসে। নতুন প্রাণ বেড়ে ওঠার কারণে যেমন খাওয়া-দাওয়ার চাহিদা বাড়ে, তেমনই ওজনও দ্রুত বাড়তে শুরু করে। শুধু খাবার নয়, শিশুর বৃদ্ধি, শরীরে অতিরিক্ত জল জমা, হরমোনের ওঠানামা, সব মিলিয়েই এই সময়ে ওজন বাড়া একেবারেই স্বাভাবিক।
তবে সন্তান জন্মের পর মায়েদের সবচেয়ে বড় চিন্তার একটি হয়ে দাঁড়ায় এই বাড়তি ওজন ঝরানো। অনেকেরই ধারণা, প্রসব-পরবর্তী সময়ে ওজন কমানো ভীষণ কঠিন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রসবের পর শরীর নিজে থেকেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কিছুটা ওজন কমিয়ে দেয়। ফলে পুরোটা যাত্রা ততটা ভয়ঙ্কর নয়, যতটা আগে থেকে ভাবা হয়।

গাইনোকলজিস্ট ডা. সান্তোষী নন্দিগম, যিনি প্রায়ই ইনস্টাগ্রামে হবু মায়েদের জন্য গর্ভাবস্থা-সংক্রান্ত নানা পরামর্শ শেয়ার করেন। সম্প্রতি এক পোস্টে প্রসব-পরবর্তী ওজন কমার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, “অনেক নতুন মা-ই ‘বেবি ওয়েট’ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কিন্তু সত্যিটা হল, আপনার শরীর স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা ওজন ঝরিয়ে ফেলে, ঠিক যেদিন আপনার সন্তান জন্মায়।”

ডা. নন্দিগম জানান, সাধারণত সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় পাঁচ থেকে সাত কেজি পর্যন্ত ওজন কমে যায়। এর প্রধান কারণ হল শিশুর জন্ম, প্লাসেন্টা বেরিয়ে আসা, অ্যামনিওটিক তরল, শরীরের ভিতরের রক্ত এবং তরলের পরিবর্তন।

ডা. নন্দিগম নতুন মায়েদের জন্য কিছু সহজ এবং বাস্তবসম্মত টিপস শেয়ার করেছেন, যা তাঁদের ধীরে ধীরে বেবি ওয়েট কমাতে সাহায্য করবে। তবে মায়ের স্বাস্থ্যের উপর অতিরিক্ত চাপ না ফেলেই যাতে তা সম্ভব হয়, সেদিকেও নজর রেখেছেন তিনি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে সক্রিয় থাকা, এই কয়েকটি অভ্যাসই বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রসব-পরবর্তী সময়ে মায়েদের জন্য ওজন কমানো এবং সুস্থ শরীরে ফিরে আসা একটি ধীর প্রক্রিয়া। ডা. নন্দিগম মনে করিয়ে দেন, এই যাত্রা কখনওই হঠাৎ বা তাড়াহুড়ো করে সম্পন্ন করা উচিত নয়। বরং শরীরকে সঠিক পুষ্টি, বিশ্রাম এবং যত্ন দিয়ে ধাপে ধাপে এগোতে হয়।

তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিটি খাওয়ার পাত প্রোটিন, শাকসবজি এবং আঁশভিত্তিক উপাদান দিয়ে সাজাতে। নিরামিষভোজীদের জন্য ডাল, পনির, গ্রীক দই, কিনোয়া কিংবা সয়াবিন হতে পারে ভাল প্রোটিনের উৎস। আর আমিষভোজীদের জন্য চর্বি কম মাংস, মাছ বা ডিম দারুণ উপকারী।

পর্যাপ্ত জল পান করাও সমান জরুরি। শুধু সাধারণ জল নয়, জিরে, মৌরি বা জোয়া দিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া জলেও দিনভর চুমুক দেওয়া যেতে পারে। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত জল কমায় এবং মেটাবলিজম সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।

শরীরচর্চা শুরু করা উচিত ধীরে ধীরে। হাঁটা, হালকা যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। তবে প্রসবের অন্তত ছ’সপ্তাহ পর, এবং চিকিৎসকের অনুমতি পাওয়ার পরই শরীরচর্চা শুরু করা উচিত। এখানেও ধারাবাহিকতার উপর নজর দিতে হবে, তীব্রতার উপর নয়।

নতুন শিশুকে সামলানো কঠিন। তা করতে গিয়ে ঘুম  এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। অল্প সময়ের ঝিমুনি কিংবা সচেতনভাবে কিছুক্ষণ নিজেকে শান্ত রাখার চর্চা শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে। সহজ অনুভূতিগুলো লিখে রাখা বা জার্নালিং করা মানসিক চাপ হালকা করতে আশ্চর্যভাবে সাহায্য করে।
সবশেষে একা না থেকে সহায়তা নেওয়ার কথাও জোর দিয়ে বলেন ডা. নন্দিগম। গাইনোকোলজিস্ট, পুষ্টিবিদ বা ট্রেনারের মতো বিশেষজ্ঞরা প্রসব-পরবর্তী সময়ে শরীরকে ফিট করতে তুলতে সাহায্য করতে পারেন।
তিনি মনে করিয়ে দেন, সন্তান জন্মের পর শরীরকে আগের মতো করে তোলার তাড়াহুড়োর কোনও দরকার নেই। আসল ব্যাপার হল নিজেকে শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী এবং সুস্থ অনুভব করা।