আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবিবাবু লিখেছিলেন বটে, "অনাদর এক মস্ত স্বাধীনতা", কিন্তু বাড়ির আসবাবপত্র কিন্তু কবিগুরুর এই কথা মানতে মোটেই রাজি হবে না। কারণ, বাজারের রকমারি নতুন জিনিসের হাতছানিতে পুরনো আসবাব বা বাতিল হয়ে যাওয়া সামগ্রী ঘরের কোণে অনাদরেই পড়ে থাকে। ক্রমে কিছুদিন পর সেগুলির স্থান হয় ডাস্টবিনে। অথচ জানেন কি, সামান্য সৃজনশীলতা আর একটুখানি ইচ্ছে থাকলে এই বাতিল জিনিসগুলিই হয়ে উঠতে পারে গৃহসজ্জার মধ্যমণি। বর্তমানে এই পদ্ধতিকেই পোশাকি ভাষায় বলা হয় ‘আপসাইক্লিং’। সোজা কথায়, পুরনো বা অব্যবহৃত জিনিসকে ফেলে না দিয়ে, তার গুণগত মান আরও বাড়িয়ে নতুন রূপে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার শিল্পই হল আপসাইক্লিং। এতে যেমন অপচয় কমে, তেমনই সুস্থ থাকে পকেটও।

১. পুরনো শাড়িতে নতুন সাজ: বাঙালি মা ঠাকুমার আলমারিতে এমন অনেক পুরনো শাড়ি পাওয়া যায়, যা হয়তো আর পরা হয় না, কিন্তু তার নকশা বা রঙের মাদকতা আজও অমলিন। এই শাড়িগুলিকে ফেলে না দিয়ে সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন কুশন কভার, টেবিল কভার, জানলার পর্দা অথবা ওয়াল হ্যাংগিং। একটু সেলাইয়ের দক্ষতা থাকলে শাড়ির পাড় দিয়ে তৈরি হতে পারে সুন্দর ল্যাম্পশেড বা ব্যাগও। এতে ঘরের সাজে আসবে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া।

২. কাচের বোতল বা বয়ামের ভোলবদল: আচার বা জ্যামের পুরনো কাচের বয়াম কিংবা পানীয়ের বোতল – এগুলিও আপসাইক্লিংয়ের চমৎকার উপাদান। পরিষ্কার করে রং করে বা দড়ি জড়িয়ে এগুলিকে বানিয়ে ফেলুন ফুলদানি, ক্যান্ডেল হোল্ডার অথবা ছোটখাটো জিনিস রাখার পাত্র। বিভিন্ন রঙের সুতো, ফেব্রিক বা অ্যাক্রিলিক রং ব্যবহার করে কাচের বোতলে ফুটিয়ে তোলা যায় লোকশিল্পের নানা নকশা।

৩. বাতিল টায়ার বা বালতি: পুরনো, অব্যবহৃত টায়ার বা ভাঙা বালতিও কিন্তু ফেলনা নয়। অকারণে ফেলে রাখলে জল জমে, সেখানে ডিম পাড়ে মশা। তার বদলে বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বাগান করার শখ থাকলে এই টায়ারগুলিকে ব্যবহার করা যেতে পারে গাছের টব হিসেবে। পছন্দসই রং করে বা দড়ি পেঁচিয়ে এর উপরে পেতে দিন কাঠের পাটাতন, তৈরি হয়ে যাবে বসার ছোট্ট টুল বা কফি টেবিল। একইভাবে, পুরনো বালতি রং করে বা কাপড় জড়িয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে লন্ড্রি বাস্কেট বা খেলনা রাখার পাত্র হিসেবে।

৪. কাঠের টুকরো বা পুরনো আসবাবের নবকলেবর: ভেঙে যাওয়া চেয়ারের পায়া, পুরনো কাঠের ক্রেট কিংবা অব্যবহৃত জানলার পাল্লা – সামান্য পরিশ্রমে এগুলিও হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয়। কাঠের টুকরোগুলিকে জুড়ে বানিয়ে ফেলুন ওয়াল শেলফ, চাবির রিং রাখার হোল্ডার।

৫. খবরের কাগজ বা ম্যাগাজিনের শৈল্পিক ব্যবহার: বাড়িতে জমে থাকা পুরনো খবরের কাগজ বা ম্যাগাজিন দিয়েও যে কত কী তৈরি হতে পারে, তা জানলে অবাক হতে হয়। কাগজের সরু রোল তৈরি করে তা দিয়ে বোনা যেতে পারে ঝুড়ি, পাপোশ, টেবিল ম্যাট। আঠা দিয়ে জুড়ে কাগজের মণ্ড তৈরি করে তা দিয়ে বানানো যায় মাস্ক, মূর্তি বা ঘর সাজানোর অন্যান্য উপকরণ। ছোটদের সঙ্গে নিয়ে এই ধরনের কাজ করলে তাদের সৃজনশীলতাও বাড়বে।