রান্নায় হলুদ একটি অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আর্য়ুবেদে হলুদকে ওষুধ হিসাবে গণ্য করা হয়। আবার হলুদ আমাদের দেশের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের নিয়মেও লাগে। সকালে উঠে খালি পেটে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেলে অনেক রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই অনেকেই রোজ সকালে কিংবা ভাতের পাতে কাঁচা হলুদ খান। আবার উপকারের কথা ভেবে রান্নাতেও বেশি হলুদ ব্যবহার করেন অনেকে। অনেকে রোজ হলুদের সাপ্লিমেন্টও খান। কিন্তু জানেন কি এই হলুদই অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে! তাহলে ডায়েটে মাত্রাতিরিক্ত হলুদ রাখলে শরীরে কী প্রভাব পড়তে পারে, জেনে নেওয়া যাক।
হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত খেলে এটি শরীরের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষত, হলুদের কারকিউমিন কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে হলুদের সাপ্লিমেন্ট বেশি খেলে কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আরও পড়ুনঃ ত্বকেও ফুটে ওঠে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ! কোন কোন উপসর্গ জানান দেয় নিঃশব্দে মারণ রোগের ঝুঁকি?
* পরিমিত পরিমাণে হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করলে কিডনিতে অক্সালেট জমার প্রবণতা বাড়তে পারে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা আছে, তাঁদের হলুদ খাওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অতিরিক্ত হলুদ কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। হলুদ সেবনে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা আরও রয়েছে। হলুদ ওজন কমাতে কার্যকর। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে ডায়েটে হলুদ কম রাখুন।
* বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাঁরা পরিমাণে হলুদ খেতে পারেন। ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ও সবুজ শাকসবজির সঙ্গে হলুদ খেলে অক্সালেটের প্রভাব কমতে পারে। তাই চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন হলুদ খেলেও অতিরিক্ত খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
* অতিরিক্ত মাত্রায় হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হলে লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এ রকম হলে ক্ষুধামান্দ্য ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। চোখ, ত্বক ও প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়। লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

* অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করলে রক্তের সুগার কমে যেতে পারে। এর কারণে বুক ধড়ফড় করা, ঘাম হওয়া ও শরীর কাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে জ্ঞানও হারাতে পারেন।
* হলুদ থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়। তাই বেশি হলুদ খেলে ত্বকে সংক্রমণ, পেট ব্যথা-সহ একাধিক সমস্যা হতে পারে। পেটের গণ্ডগোল, গা বমি ভাব, ডায়রিয়া-সহ একাধিক সমস্যার কারণও হতে পারে অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া।
* হলুদ ক্যানসার নিরাময়ে যেমন সাহায্য করে, ঠিক তেমনি অ্যান্টিক্যানসারের কিছু ওষুধ আছে যেগুলির হলুদ সেবনের ফলে কার্যকারিতা কমে যায়। হলুদ রক্ত জমাট বাঁধার স্বাভাবিক প্রবণতা কমায়। ফলে ২ সপ্তাহের মধ্যে যাঁরা অপারেশন করবেন, হলুদ গ্রহণের ফলে অপারেশনে তাঁদের অধিক রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একই কারণে যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাঁদেরও কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত নয়।
কতটা হলুদ খাবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা হলুদ দিনে ৫ থেকে ১০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। একাধিক গবেষণায় এও বলা হয়েছে, দৈনিক ডায়েটে ৫০০-১০,০০০ মিলিগ্রাম হলুদই যথেষ্ট। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, যাঁদের পিত্তদোষ আছে, তাঁরা এই মশলা এড়িয়ে চলুন। কারণ হলুদ শরীরকে গরম করে তোলে।
