আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের মোরেনায় একটি গাড়ির ধাক্কায় রাস্তায় প্রাণহীন পড়ে ছিল একটি কোবরা। এরপর যা ঘটেছিল তা সোশ্যাল মিডিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। কাছের ঝোপ থেকে একটি কোবরা বেরিয়ে এসে মৃত কোবরার কাছে এসে বসে পড়ে। পুরানো লোককাহিনীর দৃশ্যের মতো প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ঠায় সেখানেই বসে থাকে। যেন সঙ্গীর  মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে। পরের দিন কোবরাটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা এটিকে একটি মর্মান্তিক প্রেমের গল্প বলে তাৎক্ষণিকভাবে অভিহিত করেছিল। অনেকেরই বিশ্বাস, সঙ্গীর মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মারা গিয়েছে কোবরাটি। কারও দাবি, সতীদাহ রীতিতে জীবন ত্যাগ করেছে সাপটি। কিন্তু প্রাণীজগতে কি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে? নাগ (পুরুষ সাপ) এবং নাগিন (স্ত্রী সাপ) এর মধ্যে সম্পর্ক কি পৌরাণিক কাহিনীতেই রয়েছে শুধু?

আমাদের দেশের সাংস্কৃতিতে সাপকে পবিত্র বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে কোবরা ভগবান শিবের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁর গলায় পেঁচানো অবস্থায় দেখা যায়। বংশ পরম্পরায় চলে আসা গল্প এবং লোকবিশ্বাসে, নাগ এবং নাগিনকে চিরন্তন প্রেমিক হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। একে অপরের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ।

গ্রামাঞ্চলের অনেক গল্পে প্রতিশোধ নিতে আগ্রহী স্ত্রী সাপদের কথা বলা হয়েছে। যারা তাদের সঙ্গীর হত্যার পর মানুষকে আক্রমণ করে। এটি অসংখ্য জনপ্রিয় গল্প, চলচ্চিত্র এবং কুসংস্কারের ভিত্তি তৈরি করেছে। গ্রামের গল্প থেকে শুরু করে বলিউডের সাপের প্রতিশোধের সিনেমা পর্যন্ত।

কিন্তু এই বিশ্বাসগুলির কোনও বাস্তব ভিত্তি রয়েছে কি? বিজ্ঞান কিন্তু অন্য গল্প বলে। কোবরা-সহ অন্যান্য সাপগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতো মানসিক সম্পর্ক তৈরি করে না। যদিও সঙ্গীর মৃতদেহের পাশে অপেক্ষা করা একটি শোকার্ত সাপের চিত্র হৃদয়বিদারি। বিজ্ঞান মনে করে যে এটি অসম্ভব যে শোকের কারণে ‘মৃত্যু বেছে নিয়েছে’ সাপটি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাপ স্বভাবত একা থাকতে ভালবাসে। এরা মূলত মিলনের জন্য একত্রিত হয় এবং মিলনের পরপরই আলাদা হয়ে যায়। সাপ পূর্ববর্তী সঙ্গীদের চিনতে বা মনে রাখতে পারে এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। প্রাণীজগতে মাত্র কয়েকটি প্রজাতি (যেমন রাজহাঁস বা কিছু নেকড়ে) একবিবাহ বা সঙ্গীর প্রতি আসক্তি প্রদর্শন করে। সাপ এই শ্রেণীতে পড়ে না।