শীতকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া অনেকের কাছেই একটি আতঙ্কের মুহূর্ত—গরম কম্বল বা ঘরের আরাম ছেড়ে ঠান্ডায় বাথরুমে যাওয়া সত্যিই কঠিন। তার উপর যদি কোষ্ঠকাঠিন্য এসে উপস্থিত হয়, তবে অপেক্ষার সময় আরও দীর্ঘ এবং কষ্টদায়ক হয়। শীতের সময় সঠিক অভ্যাস বজায় না রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়, যার ফলে সকালে বাথরুমে বসে থাকতে হয় আরও বেশি সময়। আইবিএস-এর উপসর্গের মধ্যে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যতম। 

কেন শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ে?

চিকিৎসক সানিল পারেখ জানান, শীতকালে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে বড় পরিবর্তন আসে, যা সরাসরি হজমক্ষমতা ও অন্ত্রের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।

ডা. পারেখ বলেন, “শীতে ঠান্ডা জল পান করতে অনীহা দেখা দেয়, ফলে জলের পরিমাণ কমে যায় এবং শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়। এর ফলে মল শক্ত হয়ে যায়। পাশাপাশি ঠান্ডার কারণে মানুষ কম নড়াচড়া করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।”

এছাড়া খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। শীতের খাবার সাধারণত ভারী, তেল-চর্বিযুক্ত ও আঁশ-কম হয়ে থাকে। তাজা ফল ও সবজির পরিমাণ কমে যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়।

শীতে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ৬টি কার্যকর টিপস

শীতে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানো কঠিন নয়—বরং নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখলেই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

পর্যাপ্ত জল পান করুন

শীতেও দিনে ২–৩ লিটার জল পান করা জরুরি।
হার্বাল টি, গরম স্যুপ ও ব্রথ শরীরের জলের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে এবং হজমক্রিয়া সক্রিয় রাখে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, এগুলো শরীরকে জলশূন্য করে।

খাবারে ফাইবার পরিমাণ বাড়ান

আপেল, কমলা, পেয়ারা, নাশপাতির মতো ফল বেশি খান।
গাজর, বিট, পালং শাক, বাঁধাকপির মতো ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
ওটস, ব্রাউন রাইস, কিনোয়া মতো হোল গ্রেন খাবেন নিয়মিত।

সক্রিয় থাকুন

প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
নিয়মিত রুটিন মেনে চলুন
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান।
বাথরুম ব্যবহারে নিয়ম তৈরি করুন, এতে স্বাভাবিকভাবে মল ত্যাগের অভ্যাস তৈরি হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার কমান

চিপস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ফাস্ট ফুডে ফাইবারের পরিমাণ প্রায় নেই।
এর পরিবর্তে বাদাম, তাজা ফল বা হোল-গ্রেন ক্র্যাকার বেছে নিন।
যতটা সম্ভব বাড়িতে রান্না করা তাজা খাবার খান।

প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করুন

প্রুনস হালকা প্রাকৃতিক জোলাপ হিসেবে কাজ করে।
পেঁপে, লেবুর জল, ঘি—এগুলোও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

শীতকালে পেটের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত জল পানের অভ্যাস, এবং নিয়মিত ব্যায়াম—এই অভ্যাসগুলো বজায় রাখলে মৌসুমি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অসুবিধা থেকে সহজেই দূরে থাকা সম্ভব।