শীতকালে গরম চা বা কফির কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু করা অনেকেরই অভ্যাস। তবে এই অভ্যাসই ঠান্ডার দিনে আপনার জয়েন্টের স্বাস্থ্যের বড় শত্রু হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে অতিরিক্ত চা-কফি পান করলে জয়েন্টের শিথিলতা, ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়তে পারে।
চিকিৎসকের ব্যাখ্যা, চা ও কফিতে থাকে প্রচুর ক্যাফিন, যা শরীরে মৃদু ডাইউরেটিক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ ক্যাফিন শরীর থেকে জল বার করে দেয় এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। শীতের সময় অনেকে এমনিতেই খুব কম জল খান। এর সঙ্গে যদি পরপর কয়েকবার চা–কফি পান করা হয়, তবে শরীরের মোট জলাভাব আরও বেড়ে যায়। এই জলশূন্যতা সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের কার্টিলেজে যা দুই হাড়ের মাঝখানে নরম কুশনের মতো কাজ করে।
কার্টিলেজে যথেষ্ট জল না থাকলে তা শক্ত হয়ে যায়, নমনীয়তা কমে যায় এবং হাঁটা–চলা বা উঠে–বসার সময় জয়েন্টে ব্যথা, অস্বস্তি বা ক্র্যাম্পিং বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে শীতকালে যারা অ্যারথ্রাইটিস বা পুরনো হাঁটু–ব্যথায় ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চা–কফির অতিরিক্ত ব্যবহার সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। অনেকেই ভাবেন গরম চা বা কফি শরীরকে গরম রাখে, কিন্তু বাস্তবে এটি শরীরের জয়েন্টগুলো শুকিয়ে দেয় এবং স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয়।
তাই চা কিংবা কফি খেতেই পারেন, তবে তার সঙ্গে পর্যাপ্ত জল পান করা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি কাপ চা–কফির পর অন্তত এক গ্লাস জল পান করতে হবে। এতে শরীরের মোট হাইড্রেশন বজায় থাকবে এবং কার্টিলেজ শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কমবে। এছাড়া শীতে ঘরে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে মাঝেমধ্যে হাত-পা নাড়ানো, হালকা স্ট্রেচিং করা, হাঁটু-মচলানো বা কয়েক মিনিট হাঁটা—এগুলো করা জরুরি। শরীরকে সক্রিয় ও চলমান রাখলে stiffness বা ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, শীতকালে খাবারে থাকা তরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। স্যুপ, ডাবের জল, গরম জলে লেবু বা ভিটামিন–সমৃদ্ধ ফলের রস—এসবও জয়েন্টের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সবমিলিয়ে, শীতের আরামে বারবার চা বা কফি খাওয়া শরীরের জন্য ততটা আরামদায়ক নয়, যতটা ভাবা হয়। জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে হাইড্রেশনই হল সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। তাই শীতে চা–কফির সঙ্গে জল–খাওয়ার অভ্যাসকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
