আজকাল ওয়েবডেস্ক: টেকনো ইন্ডিয়ার আমোদিত আয়োজনে, সত্যম রায়চৌধুরীর প্রাণন ও প্রয়াসে, বসন্ত ঋতুর প্রারম্ভে, ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টায় কলকাতার লেক ক্লাবে শুরু হল সারাদিনব্যাপী এক অবিস্মরণীয় আর্ট ক্যাম্প, সার্থক নাম যার 'রং ২০২৫'। এই আর্ট ক্যাম্পের রঙিন ক্যানভাসে ফুলের মত ফুটে রইল সকলের প্রিয়, সদ্য প্রয়াত মৌ রায়চৌধুরীর জন্যে মনকেমন তিনটি শব্দ 'মৌ বনে আজ'! মৌ আমাদের মধ্যে না থেকেও আছেন। তার স্বাগত - বিদায়ের বসন্ত মিশে রইল ' রং ২০২৫'-এর প্রকাশে, প্রিয়তায় । 'রং ২০২৫' এর উদ্বোধন করলেন প্রবুদ্ধ শিল্পী যোগেন চৌধুরী। 'রং ২০২৫'-এর ক্যানভাসে যে নয় শিল্পীর রং-তুলি-কল্পনার সৃজন প্রবাহ দেখা দিল তাঁরা হলেন যোগেন চৌধুরী, সমীর আইচ, তাপস কোনার, অমিতাভ ধর, সনাতন দিন্দা, তমালি  দাশগুপ্ত, রাখি রায়, শিলাজিৎ ঘোষ এবং সুদীপ ব্যানার্জি।


যোগেন চৌধুরী এঁকেছেন এক নারীর অবয়ব। দূর থেকে দেখলে বোঝা যায় এই নারীর মুখের প্রতিটি রেখায়, বদলে বদলে যাওয়া বিচিত্র অনুষঙ্গে যোগেনের নির্ভূল স্বাক্ষর। তাঁর প্রাণের আগুন কালো শিখায় জ্বলছে। সমীর আইচ জ্যামিতিক স্পষ্টতায় এনেছেন রঙের তারল্য এবং কালচে পশ্চাৎ পটের প্রবল প্রত্যয়। ছবিটি শুধু আমরাই দেখছি না, ছবিটাও দেখছে আমাদের। ঝলসে দেয় সেই দৃষ্টি। সমীর কোথায় পায় এই প্রবলতা, এই পৌরুষ? প্রায় পাশেই রাখি রায়ের নিজস্ব ভিনাস মেয়ের চুল তার তীব্র বেগে উড়ে গিয়ে আকাশ ছুঁতে চাইছে। তবু এই নতুন কালের ভিনাসের বুকে গাইছে পৃথিবীর পাখি। আর এই অপরূপ নারীর ঠোঁট থেকে প্রবাহিত ফুল যেন তার কামনার লাল আগুন। এই ক্যানভাস কামনার বুকে গুলি করে রক্ত ঝরিয়েছে।  সুদীপ ব্যানার্জির লিকুইডিটি আমাদের ভিজিয়ে দেয়। তাঁর ঝলমলে তারল্য আকাশে উড়ছে, নদীতে সাঁতারু। এই তরলতা চুঁইয়ে নামে ক্যানভাস থেকে। টাপুর টুপুর। সনাতন দিন্দা মানেই মগ্নতা। ধ্যানবিন্দু। অবিচল আত্মখোঁজ। বুদ্ধের মুখ। সনাতন সৃজন করেছেন রংতুলির ভাস্কর্য। অপূর্ব! শিলাজিৎ ঘোষ রংয়ের প্লাবন। ক্রমাগত বেরোতে চাইছেন জীবনের চৌকো বন্দীত্ব থেকে, দেয়াল ফাটিয়ে। চৌকো চৌকো ঘরের মধ্যে ক্যানভাস জুড়ে মুক্তির যুদ্ধ। মানুষের। তমালি দাশগুপ্তর নারী উপবিষ্ট ছন্দময় রৈখিক বিন্যাসে। ক্যানভাস জুড়ে রমণীর রমণীয় একাকিত্ব, বিষণ্ন স্নিগ্ধতা। তাপস কোনার হয়তো এঁকেছেন মৃত্যুর পরের ছবি। পৃথিবীর রং থেকে দূরে চলে যাওয়ার ছবি। মনখারাপের ছবি। কাফকার দিনলিপিতে ভাষায় এমন ছবি কতবার ফুটে উঠেছে। অমিতাভ ধরের ছবিতে দু'টি  প্রাণী যেন আটকে আছে পরস্পরের দিকে পিছন ফিরে। তাদের পিছনে মহাকাশ। কিন্তু তারা পরস্পরকে খুঁজে পায়নি। তাই জীবনকেও পায়নি তারা। কোনও রং নেই তাদের। সব তাদের নাগালের বাইরে। রং ২০২৫ তাদের নয়? 'তবু বসন্ত জাগ্রত দ্বারে'। রং ২০২৫ খুলে দিল নতুন স্বপ্ন, নব সম্ভাবনার আলো।