আজকাল ওয়েবডেস্ক: তাঁর দমের কাছে হার মানবে অক্সিজেন ট্যাঙ্কও। সবচেয়ে বেশিক্ষণ সময় জলের গভীরে দম বন্ধ করে থাকার বিশ্বরেকর্ড গড়লেন ক্রোয়েশিয়ার ফ্রি ডাইভার ভিতোমির মারিসিচ। জলের তলায় ২৯ মিনিট ৩ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রেখে গিনেস বুকে নাম তুললেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার অপাটিজা অঞ্চলের ব্রিস্টল হোটেলের সুইমিং পুলে এই বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন শতাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এবং গিনেস বুকের বিচারকরা।
এর আগের রেকর্ডটির তুলনায় প্রায় পাঁচ মিনিট বেশি সময় ধরে শ্বাস ধরে রেখেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ডলফিন বা হারবার সিল এর মতো একাধিক প্রাণী বসবাসের জন্য বা শিকার ধরার জন্য জলে বাস করে। কিন্তু তাদেরও শ্বাস নেওয়ার জন্য জলের উপরে আসতে হয়। এবার সেই প্রাণীদের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন ভিতোমির।
আরও পড়ুন: পাড়ার বৌদিদের অন্তর্বাস চুরি একের পর এক! চোরকে সামনে পেয়ে এ কী করলেন মহিলারা?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন একজন সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৯০ সেকেন্ড দম বন্ধ করে থাকতে পারেন। সাধারণত সাঁতারু বা অন্যান্য খেলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দম ধরে রাখার ক্ষমতা একটু বেশি হয়। সাধারণত যাঁরা পেশায় ফ্রি ডাইভার, অর্থাৎ যাঁরা কোনও রকম অক্সিজেন ট্যাঙ্ক ছাড়াই সমুদ্রে ডুব দেন তাঁদের দম ধরে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই বেশি থাকে। অক্সিজেন ছাড়া প্রায় মিনিট দশেক শ্বাস ধরে রাখতে পারেন তাঁরা। কিন্তু সবাইকে টপকে গিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার এই ডাইভার।
এই রেকর্ড স্থাপন করার জন্য অবশ্য বিজ্ঞানের সহায়তাও নিয়েছেন ভিতোমির। জলে ডুব দেওয়ার আগে তিনি ডিনাইট্রোজেনেশন নামক একটি পদ্ধতির সাহায্য নেন। কী এই পদ্ধতি? ডুবুরি জানিয়েছেন এই পদ্ধতিতে জলে নামার আগে টানা ১০ মিনিট তিনি বিশুদ্ধ অক্সিজেন টেনেছেন। সাধারণ ভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় বায়ুর মূল উপাদান নাইট্রোজেনও শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় টানা ১০ মিনিট বিশুদ্ধ অক্সিজেন টানার ফলে তাঁর দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় এবং অপ্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন বেরিয়ে যায়।
এছাড়াও টানা অক্সিজেন নেওয়ার ফলে তাঁর রক্তে এবং প্লাজমাতে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। দেহে সাধারণের তুলনায় ৫ গুণ বেশি অক্সিজেন জমা হয় তাঁর। গিনিস রেকর্ড তৈরির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার অনৈতিক নয় বলেই মনে করেন বিচারকরা। কারণ অক্সিজেন নিলেও সেই অক্সিজেন ধরে রাখার জন্য প্রবল শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতা প্রয়োজন।
ভিতোমির জানিয়েছেন, বিষয়টি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টের মতো লাগলেও তিনি তাঁর শক্তি সামর্থ প্রকাশের জন্য এই কাজ করেননি। বরং তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল এই কাজের মাধ্যমে সমুদ্র এবং সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। তাঁর কথায় যিনি মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিক্ষণ জলের নিচে শ্বাস না নিয়ে থেকেছেন, ফলে এবার যখন তিনি সমুদ্র নিয়ে কিছু বলবেন, তখন সেই কথা শোনার জন্য অনেক বেশি মানুষ আগ্রহ দেখাবেন।
তবে এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখা দরকার জলে নামার আগে অক্সিজেন টেনে সবচেয়ে বেশি সময় জলের তলায় থাকার রেকর্ড তাঁর হাতে থাকলেও, কোনও রকম অক্সিজেন ব্যবহার না করে সবচেয়ে বেশিক্ষণ জলের নিচে থাকার রেকর্ড রয়েছে সার্বিয়ার ডুবুরি ব্রাঙ্কো পেট্রোভিচ-এর দখলে। তিনি টানা ১১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড জলের তলায় ছিলেম। এই রেকর্ড তিনি গড়েন ২০১৪ সালে।
