আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিংবদন্তি, বিতর্ক ও নিষেধাজ্ঞা। ইন্দোনেশিয়ায় কিছুদিন আগেও প্রচলিত ছিল এমন এক যৌন তীর্থ যা বিতর্কের ঢেউ তুলেছিল গোটা বিশ্বে। ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভায় অবস্থিত একটি পাহাড় ‘গুনুং কেমুকুস’। এই পাহাড়টি ‘সেক্স মাউন্টেন’ নামেও পরিচিত। আর সেই পাহাড়কে কেন্দ্র করেই এক অদ্ভুত প্রথা বহু বছর ধরে প্রচলিত ছিল।
কিংবদন্তি অনুযায়ী, এটি এমন একটি তীর্থ ক্ষেত্র যেখানে কোনও মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে হলে, বিশেষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে হলে, পাহাড় চূড়ায় সঙ্গম করতে হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে এখানে এক রাজপুত্র ছিলেন, নাম পাঙ্গেরান সামোদ্র। সৎমা নিয়াই অন্ত্রোউলান-এর তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, তাঁরা দুজনে এই গুনুং কেমুকুস পাহাড়ে এসে গোপনে মিলিত হতেন। কিন্তু একদিন মিলনের সময়ই তাঁরা ধরা পড়ে যান এবং তাঁদের হত্যা করা হয়। তাই পাহাড়ের উপরেই রয়েছে তাঁদের সমাধি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক অদ্ভুত বিশ্বাস জন্মায় স্থানীয়দের মধ্যে। স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যদি কোনও ভক্ত তাঁদের অসমাপ্ত মিলনের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে একই কাজ করেন, তাহলে তাঁর ভাগ্য খুলে যাবে। এই বিশ্বাস অনুযায়ী, তীর্থযাত্রীদের ৩৫ দিন অন্তর অন্তর মোট সাতবার ওই সমাধির সামনে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক ভাবে মিলিত হতে হতো। জাভানিজ ক্যালেন্ডারের ‘জুমাত পন’ বা পন শুক্রবার দিনটিকে এই প্রথার জন্য সবচেয়ে শুভদিন বলে মনে করা হতো। সেকারণে এই সময় ‘পন উৎসব’ নামে একটি যৌন উৎসবও হত পাহাড়ের উপর।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আধ্যাত্মিক প্রথাটি আসল উদ্দেশ্য থেকে সরে যায়। এবং পাহাড়টি এক বিশাল অবৈধ যৌন ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়। সারা ইন্দোনেশিয়া এমনকি বিদেশ থেকেও বহু মানুষ ভাগ্য ফেরানোর আশায় এখানে আসতেন এবং এই প্রথার আড়ালে সেখানে ব্যাপক হারে দেহব্যবসা চলত। এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের আশঙ্কাও মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
২০১৪ সালে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিষয়টির উপর একটি তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়। তার পরই বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় এই লোকাচার নিয়ে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইন্দোনেশিয়ার সরকার নড়েচড়ে বসে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে কঠোরভাবে এই প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে গুনুং কেমুকুসকে একটি পারিবারিক ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে।
