হৃদরোগ এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান মৃত্যুর কারণ। অল্প বয়সেই আর্টারি বা ধমনীতে ব্লকেজ ধরা পড়ছে। তাই চিকিৎসকরা বার বার হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে সতর্ক করছেন। কিন্তু ব্যস্ততার জীবনে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে বাড়িতেই কিছু সহজ উপায়ে হার্ট ব্লকেজ হচ্ছে কিনা বুঝতে পারেন। তাহলে জেনে নিন বাড়িতে করা যায় এমন তিনটি সহজ পরীক্ষা এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত, যা কখনও অবহেলা করা উচিত নয়।

১. পালস মাপাঃ আপনার হার্ট প্রতি মিনিটে কতবার স্পন্দন করছে, সেটিই হার্টরেট। স্বাভাবিক বিশ্রাম অবস্থায় হার্ট রেট থাকে ৬০ থেকে ১০০ বিট প্রতি মিনিটে। আপনার বাঁ হাতের কবজির ভিতরের দিকে অর্থাৎ বুড়ো আঙুলের নিচে ডান হাতের দুই আঙুল রাখুন। স্পন্দন অনুভব করলে ১০ সেকেন্ড গুনে নিন, তারপর সংখ্যাটি ৬ দিয়ে গুণ করুন। ফলাফলই হবে প্রতি মিনিটের হার্ট রেট। যদি হার্ট রেট বিশ্রাম অবস্থায় অতিরিক্ত বেশি অর্থাৎ ১০০-এর ওপরে বা খুব কম যেমন ৬০-এর নিচে হয়, এবং আপনি পেশাদার অ্যাথলিট না হন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ রাতের খাবার খেয়েই বিছানায় উঠে পড়েন! ছোট্ট একটি কাজ না করেই ডেকে আনছেন হার্টের রোগ, সাবধান

২. 'স্টেয়ার টেস্ট' বা সিঁড়ি ওঠা পরীক্ষাঃ এই পদ্ধতিতে সহজেই হৃদয়ের সক্ষমতা বোঝা যায়। একটানা চারতলা বা প্রায় ৬০ ধাপ সিঁড়ি উঠে দেখুন আপনি কেমন অনুভব করছেন। যদি ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভব না করে সহজে উঠতে পারেন তাহলে হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা সাধারণত স্বাভাবিক রয়েছে বলে ধরা হয়। কিন্তু যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুক টানটান লাগে বা মাথা ঘোরা শুরু হয়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।এটি হার্ট ব্লকেজ বা অক্সিজেন সঞ্চালন কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

৩. স্মার্ট ওয়াচ বা অ্যাপের সাহায্যে হার্ট মনিটরিংঃ বর্তমানে স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচের সেন্সর ব্যবহার করে হার্ট রেট এবং হৃদয়ের ছন্দ বা রিদম মাপা যায়। উন্নত ডিভাইসগুলো অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনও শনাক্ত করতে সক্ষম। তবে মনে রাখবেন, এগুলো শুধুমাত্র প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে। যদি ডিভাইসে অস্বাভাবিক রিডিং দেখা যায় বা বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি ইত্যাদি উপসর্গ অনুভব করেন তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের কাছে যান।

যে সতর্ক লক্ষণগুলো কখনও উপেক্ষা করা উচিত নয় তা হল- 

*বুকের মাঝ বরাবর চাপ বা জ্বালাভাব

*বুক ধড়ফড় করা বা হঠাৎ দ্রুত স্পন্দন

*হাত, পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া

*বিশ্রাম অবস্থায়ও শ্বাসকষ্ট

*মাথা ঘোরা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি

এই লক্ষণগুলোর যে কোনও একটি থাকলে তা উপেক্ষা করবেন না। কারণ এগুলো হতে পারে করোনারি আর্টারি ব্লকেজের প্রাথমিক সংকেত। চিকিৎসকদেরমমতে, নিয়মিত ব্যায়াম, কম তেল-লবণযুক্ত খাবার, ধূমপান ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা-এই অভ্যাসগুলো হৃদয়কে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখে। এছাড়াও ৪০ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার ইসিজি বা স্ট্রেস টেস্ট করা জরুরি।