আগে ষাটের দোরগোড়ায় পৌঁছলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যেত। কিন্তু এখন এই সমস্যায় ভুক্তভোগী কমবয়সিরাও। অফিসে কোন দিন কোন মিটিং, বাড়িতে ফেরার সময়ে জরুরি কোন কোন জিনিস নিয়ে যেতে হবে কিংবা প্রিয়জনকে দেওয়া কথা-কিছুই যেন মনে রাখতে পারেন না তরুণ তুর্কিরা। এদিকে মনের ভুলের কারণে ক্ষতি হচ্ছে কাজের, বাড়ছে ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাও। যার জন্য ওষুধ বা জটিল চিকিৎসা নয়,একটি সহজ অভ্যাসে ভরসা রাখতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিশেষ কৌশলই স্মৃতিশক্তি অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই অভ্যাসটির নাম হল ‘সক্রিয় মনে করার অভ্যাস অর্থাৎ অ্যাক্টিভ রিকল (Active Recall)'। সাধারণভাবে আমরা পড়াশোনা বা নতুন কিছু শেখার সময় শুধু বই পড়ে যাই বা বারবার চোখ বুলিয়ে নিই। কিন্তু এতে মস্তিষ্ক খুব বেশি কাজ করে না। অ্যাক্টিভ রিকল পদ্ধতিতে পড়ার পর বই বন্ধ করে নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়, ‘আমি কী পড়লাম?’, ‘পড়ার মূল বিষয় কী?, ‘এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ?’। এতে মস্তিষ্ক তথ্য মনে করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং স্মৃতি আরও মজবুত হয়।
ধরা যাক, আপনি একটি খবর বা বইয়ের একটি অংশ পড়লেন। এবার সঙ্গে সঙ্গে আবার পড়বেন না। চোখ বন্ধ করে বা খাতায় লিখে দেখুন, কতটা মনে আছে। প্রথমে কম মনে থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই চেষ্টাই মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দেয়। যত বেশি চর্চা করবেন, তত স্মৃতিশক্তি বাড়বে।
এই অভ্যাসের সঙ্গে আরও কয়েকটি ছোট কাজ যোগ করলে ফল ভাল হয়। যেমন নিজের ভাষায় নোট লেখা। কোনও কিছু দেখে অর্খাৎ কপি করে লেখা নয়, বরং যা বুঝেছেন তা নিজের মতো করে লিখলে মস্তিষ্ক তথ্যটি গভীরভাবে ধরে রাখে। আরেকটি ভাল উপায় হল, কাউকে বোঝানো। আপনি যা শিখেছেন, তা অন্য কাউকে বোঝাতে পারলে বুঝবেন নিজের মনে সেটির পরিষ্কার ধারণা রয়েছে।
একটানা দীর্ঘ সময় পড়ার বদলে অল্প সময়ে বারবার পড়া অনেক বেশি কার্যকর। ২৫–৩০ মিনিট পড়ে ৫ মিনিট বিরতি নিয়ে আবার পড়লে তা স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল। এতে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয় না এবং তথ্য ধরে রাখতে সুবিধা হয়।
তাছাড়া এই অভ্যাস শুরু করতে কোনও টাকা লাগে না, বাড়তি সময়ও নয়। শুধু পড়ার ধরনটা একটু বদলাতে হবে। নিয়মিত অ্যাক্টিভ রিকল চর্চা করলে ধীরে ধীরে ভুলে যাওয়ার সমস্যা কমবে এবং স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি ধারালো হয়ে উঠবে।
এছাড়া ভাল ঘুমও খুব জরুরি। ঘুমানোর সময়ই মস্তিষ্ক দিনের শেখা তথ্যগুলো গুছিয়ে রাখে। ঠিকমতো ঘুম না হলে যতই সারাদিন পড়াশোনা করুন, মনে থাকবে না। প্রতিদিন অন্তত ৬–৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
