আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বাস যে কোনও সম্পর্কের মেরুদণ্ড। আর সেই মেরুদণ্ডেই যদি ফাটল ধরে, তাহলে তার প্রতিধ্বনি শুধু মনেই নয়, শোনা যায় প্রতিটি স্নায়ুতে। আক্ষরিক অর্থেই। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতা বহু সময়েই মনস্তাত্ত্বিক অভিঘাতের রূপ নেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘পোস্ট-ইনফিডেলিটি স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ (পি আই এস ডি)।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
কবিরা বলবেন, “বিশ্বাসঘাত কিছুটা যেন মাথায় বাজ পড়ার মতো।” এবার বিজ্ঞানীরাও বলছেন একই কথা। অকস্মাৎ বিশ্বাসঘাতকতা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র এমন ভাবে আঘাত হানে যে মস্তিষ্ক একে একটি ‘থ্রেট রেসপন্স’ বা বিপদের সঙ্কেত হিসেবে গণ্য করে। সক্রিয় হয়ে ওঠে শরীরের স্বাভাবিক ‘ফাইট, ফ্লাইট বা ফ্রীজ’ প্রতিক্রিয়া। হঠাৎ করেই রক্তে বেড়ে যায় অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন। তার ফল? তীব্র উদ্বেগ, অস্থিরতা, অতিসতর্কতা এবং অস্বস্তির মতো সমস্যা।
মস্তিষ্কের কোন কোন অংশ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় এর ফলে? সেই ধারণাও দিচ্ছেন গবেষকরা। বিশ্বাসঘাতকতার এই মানসিক ধাক্কা সরাসরি প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে।
১. অ্যামিগডালা, যা ভয় ও হুমকির প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
২. হিপ্পোক্যাম্পাস, যা স্মৃতি ও শেখার প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
৩. প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
বিজ্ঞানীদের মতে, এই অঙ্গগুলি আক্রান্ত হলে অনাহূত চিন্তা, অতীতের মুহূর্তগুলির ফ্ল্যাশব্যাক, মনোযোগে ঘাটতি এবং চিন্তাশক্তির দুর্বলতা দেখা দেয়। মানুষ অনেক সময় অকারণে অপরাধবোধে ভোগেন, নিজের উপরেই সন্দেহ করতে শুরু করেন। আর যদি সঙ্গী তাঁকে ‘গ্যাসলাইট’ করেন, অর্থাৎ মানসিক ভাবে বিভ্রান্ত করতে থাকেন, তবে তো কথাই নেই। সমস্যা আরও জটিল হয়।
শুধু মানসিক নয়, এর ছাপ পড়ে শরীরেও। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ থেকে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত ও অনিদ্রা, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, হজমের সমস্যা, রক্তচাপের তারতম্য এবং মেজাজের ওঠানামা এবং খিটখিটে ভাব। এমনকি কেউ কেউ এই আঘাত থেকে আর কখনও সেরে উঠতে পারেন না। জীবনভর তাঁরা একটি বিষণ্ণ, তিক্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেঁচে থাকেন, যা যে কোনও সময় গুরুতর শারীরিক জটিলতার জন্ম দিতে পারে।
তবে আশার আলো একটাই, সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার রাস্তা আছে। তবে সেই রাস্তা সহজ নয়। চাই দীর্ঘ সময় এবং নিজের প্রতি সহানুভূতি। সম্পর্ক কতটা গভীর ছিল, আঘাত কতটা তীব্র, তার উপর নির্ভর করে এই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগতে পারে ছ’মাস থেকে দু’বছর। তবে এই সমস্যার সমাধান তখনই সম্ভব যখন রোগী নিজে সক্রিয় ভাবে নিজেকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই যন্ত্রণাকে ছোট করে দেখা উচিত না। অনেক সময় বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন অজান্তেই এমন ব্যবহার করেন যে রোগীর মনে হয় তিনি বাড়াবাড়ি করছেন। বিষয়টি মোটেই এমন নয়। বরং যন্ত্রণাকে সম্মান দিন, নিজের অনুভূতির পাশে দাঁড়ান। প্রয়োজন হলে পেশাদার সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতা আপনাকে কিছুটা ভেঙে দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু গড়ে তোলার পথও রয়েছে।
