পারিবারিক সমস্যা হোক বা অফিসে বসের বকুনি, চাপের সময় হয়তো যৌনতা আপনার ভাবনার তালিকায় একেবারেই থাকে না। বরং সেই শব্দটুকু শুনলেও তখন অস্বস্তির উদ্রেক হয়। কিন্তু বিষয়টি আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, এটি উদ্বেগ কমাতে দারুণভাবে কাজ করতে পারে। শরীর স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়ায় যে হরমোন নিঃসরণ করে, যৌনসম্পর্কের সময় তার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। সক্রিয় যৌনজীবন শুধু আনন্দই দেয় না, বরং মানসিক প্রশান্তি এবং শারীরিক সুস্থতাও বাড়ায়। যা দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগ দূরে রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের যৌনসম্পর্ক মাসে একবার বা তারও কম হয়, তাঁদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। অন্য দিকে, যাঁরা সপ্তাহে অন্তত দু’বার যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হন, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের প্রবণতা কম দেখা যায়। এর একটি কারণ হতে পারে যে যৌনতা শরীরকে ব্যায়ামের মতো সক্রিয় রাখে এবং উদ্বেগ বা হতাশার সম্ভাবনাও কমায়। যাঁদের যৌনজীবন স্বাভাবিকভাবে বেশি সক্রিয়, তাঁরা শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকেও সুস্থ থাকেন।
যৌনতা প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ ক্যালোরি খরচ করে, যা দ্রুত হাঁটার সমান। এই সময় শরীর সামান্য বেশি অক্সিজেনও ব্যবহার করে, ঠিক যেমন বাগানে মাটি খোঁড়া বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার সময় হয়।
প্রথমে এটি সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব অনেক। তাছাড়া যৌনসম্পর্ক মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে, ফলে মানুষ আরও উৎসাহ পায় অন্যান্য ব্যায়াম করার জন্য, যেমন পাড়ার খেলাধুলায় যোগ দেওয়া, হাইকিং, কিংবা ঘরের কাজ।
চশমা মাথায় রেখে সারা ঘরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন? বা গাড়ির চাবিটা কোথায় আর খুঁজেই পাচ্ছেন না? বিছানায় সক্রিয় থাকলে এমন বিড়ম্বনা আর হবে না। নিয়মিত যৌনসম্পর্ক স্মৃতিশক্তি উন্নত করার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, বিশেষ করে ৫০ থেকে ৮৯ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে। তবে কেন এমন হয়, তা এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি।
রোজ না হলেও, সপ্তাহে বেশ কয়েকবার যৌনসম্পর্ক আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এর একটি বড় কারণ হল এটি শরীরে ইমিউনোগ্লোবুলিন এ (IgA) নামক জীবাণু-প্রতিরোধী উপাদানের মাত্রা বাড়ায়। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা সপ্তাহে দু’বারের বেশি যৌনসম্পর্ক করেন, তাঁদের IgA লেভেল আসলে যৌনসম্পর্ক যাঁরা করেন না, সেই ব্যক্তিদের তুলনায় কম থাকে।
যৌনসম্পর্কের পর মস্তিষ্কে এক ধরনের রাসায়নিক ‘আফটারগ্লো’ তৈরি হয়, যা প্রায় দু’দিন স্থায়ী হয়। এই প্রভাব আপনার সঙ্গীর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করে। একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুখী যৌনজীবন, বিশেষ করে সপ্তাহে অন্তত একবার যৌনসম্পর্কে যে সব দম্পতি লিপ্ত হন, তাঁদের পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া এবং ঘনিষ্ঠতা আরও মজবুত হয়ে ওঠে।
যৌনসম্পর্ক না হলে শরীরে সেই সব হরমোনের অভাব হয়, যা শান্ত এবং আরামদায়ক ঘুম আনতে সাহায্য করে। যেমন প্রোল্যাকটিন ও অক্সিটোসিন। বিশেষ করে নারীরা এই সময় অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেনের সুবিধা পান, যা ঘুমকে আরও গভীর করে তোলে।
