আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেই আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের ঢাক বাজিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। বুঝিয়ে দিলেন, এই নির্বাচনে একদিকে যেমন থাকবে বাঙলা ভাষাভাষীদের উপর ভিন রাজ্যে অত্যাচারের অভিযোগ সেইসঙ্গে থাকবে রাজ্যে নেওয়া তাঁর সরকারের যে ৯৪টি সামাজিক প্রকল্প আছে সেই প্রকল্পগুলি নিয়ে কর্মীদের নিবিড় প্রচার। আগামী ২৭ জুলাই থেকেই গোটা রাজ্যে এই নিয়ে কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিলেন মমতা। লক্ষনীয়, এদিনের বক্তব্যে বামেদের সমালোচনা করলেও মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্যে তাঁদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপি। 

রাজ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধী শিবিরের তরফে নানা সময় সমালোচনা শোনা গিয়েছে বিরোধীদের মুখে। উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া কয়েক হাজার শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের চাকরির প্রসঙ্গও। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়ে হয়েছে একাধিক মিছিল ও ধর্না কর্মসূচি। বারবার বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান নিয়ে। সোমবার বক্তব্যের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক সামাজিক প্রকল্পের উল্লেখ করে বলেন এই মুহূর্তে রাজ্যে চালু আছে ৯৪টি সামাজিক প্রকল্প।

সেইসঙ্গে বেকারত্বের হার কমেছে ৪০ শতাংশ। রাজ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই দুটি বিষয় নিয়ে প্রচারে জোর দিতে নির্দেশ দেন তিনি।‌ উদাহরণ হিসেবে তাঁর কথায় উঠে আসে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বছরে  ২ কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি। 

আরও পড়ুন: 'বাংলা ভাষার উপর চলছে বিরাট সন্ত্রাস', একুশের মঞ্চ থেকে ফের গর্জে উঠলেন মমতা...

নাম না করে এদিন মমতা বলেন, 'বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরির কথা বলা হয়েছিল। কোথায় দিয়েছে?' একইসঙ্গে রাজ্যে শিল্পায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাংলা থেকে কোনও শিল্পপতিকে চলে যেতে হয়নি। বাংলায় তাঁরা আসছেন।' সেইসঙ্গে তুলে ধরে দেউচা পাচামি-সহ রাজ্যে আগামীদিনে তৈরি হতে যাওয়া বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্র। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে।

বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই বলেই এঁরা বাধ্য হয়ে বাইরের রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। এদিন সেই শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, রাজ্যে যথেষ্ট কাজের সুযোগ আছে। 

এদিনের বক্তব্যে বারবার যে বিষয়টির উপর তিনি জোর দিয়েছেন তা হল বাংলায় কথা বলার জন্য ভিন রাজ্যে অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে। কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতি শনি ও রবিবার সব ভাষাভাষী লোকদের নিয়ে সভা করতে।‌ তিনি বলেন, ‘২৭ জুলাই নানুর দিবসের দিন থেকে প্রতি শনি-রবিবার বাংলা ভাষার উপর যে অপমান, সন্ত্রাস তার বিরুদ্ধে সব ভাষাভাষী লোকেদের নিয়ে মিটিং-মিছিল করুন। যদি কোনও পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার খবর দেয়, বিপদে আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ান, আমাদের জানান। পরিযায়ী শ্রমিকদের বলব ফিরে আসুন। বাংলায় কাজের অভাব নেই।‘ আরও বলেন, ‘২৭ জুলাই থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু করুন। ভাষার অপমান করলে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব। ভাষার উপর সন্ত্রাস মানছি না মানব না। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত, টানা এই আন্দোলন চলবে। আপনাদের বলব আপনারা আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলুন।‘

 

 সেইসঙ্গে এই নিয়ে লড়াই করতে যে তিনি ও তাঁর দল প্রয়োজনে দিল্লি পর্যন্ত যাবেন সেই বিষয়টি উল্লেখ করে মমতা বলেন, 'শুরু হল ভাষা আন্দোলন।' পড়শি রাজ্য বিহারে ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা থেকে বেশ কিছু মানুষের নাম বাদ পড়েছে। এদিন মমতা বলেন, 'বিহারে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। এখানে হলে ঘেরাও হবে।' সেইসঙ্গে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে দলীয় সাংসদদের দিল্লিতে লোকসভা চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্নায় বসার নির্দেশ দেন মমতা। আহ্বান জানান ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতের লোকজনকেও এবিষয়ে এগিয়ে আসতে। মমতার কথায়, 'দেশে একটা সুপার এমার্জেন্সি চলছে।'