আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্রাজিল তার সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য পরিচিত হলেও, দেশটি একই সঙ্গে বসবাস পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক মানুষের জন্য একটি ভাল বিকল্প হিসেবেও বিবেচিত হয়। ব্রাজিল স্থায়ী আবাসনের সুযোগ দিচ্ছে যা বিদেশিদের দেশটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাস, কাজ ও পড়াশোনার অনুমতি দেয়। আর ভারতীয়রাও এর জন্য আবেদন করতে পারেন।
ব্রাজিলকে একটি অতিথিপরায়ণ দেশ হিসেবে ধরা হয়। তবে কিছু অঞ্চলে জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি হতে পারে। যদি আপনি শর্ত পূরণ করতে পারেন এবং উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ বহন করতে সক্ষম হন তবে এটি আপনার জন্য একটি ভাল বিকল্প। এখানে ব্রাজিলের পিআর বা স্থায়ী আবাসনের যোগ্যতার মানদণ্ড ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো।
আরও পড়ুন: ফের যুদ্ধের কালো মেঘ, ইউক্রেনে ড্রোন হামলা করল রাশিয়া
সহজভাবে বলতে গেলে ব্রাজিলে স্থায়ী আবাসন মানে হল নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে আপনি দেশটিতে বসবাসও কাজ করতে পারবেন। ভারতীয়রাও এর জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাসের সুযোগ পাবেন। এখানে বিভিন্ন আবাসনের পথ রয়েছে:
ব্রাজিলিয়ান ব্যবসা বা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ একটি সাধারণ পথ।
দক্ষ চাকরি ও স্পন্সরশিপ পাওয়ার মাধ্যমে আপনি একটি অস্থায়ী রেসিডেন্স ভিসা পেতে পারেন, যা পরবর্তীতে বাড়ানো বা স্থায়ী ভিসায় রূপান্তর করা সম্ভব।
কোনও ব্রাজিলিয়ান নাগরিককে বিয়ে করলে বা ব্রাজিলিয়ান সন্তান থাকলে আপনি পিআরের জন্য যোগ্য হবেন।
অবসরপ্রাপ্ত বিদেশিরা অস্থায়ী আবাসন পারমিট পেতে পারেন যা দুই বছর ব্রাজিলে থাকার পর নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে পিআরে রূপান্তরিত করা যায়।
আপনার নিয়মিত আয় থাকলে, সাধারণত মাসে প্রায় ২,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১,৭৬,১৮৩ টাকা), আপনি দুই বছরের অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট পেতে পারেন। এটি নবায়নযোগ্য বা স্থায়ী আবাসনে রূপান্তরযোগ্য।
২০২৪ সাল থেকে স্বীকৃত ব্রাজিলিয়ান কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া বিদেশিরা স্থানীয় চাকরি পেলে দুই বছরের পারমিট পেতে পারেন, যা পরবর্তীতে পিআরে সহায়ক।
তবে, এই আবাসনের পথগুলো সরাসরি নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেয় না। তবে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্রাজিলে স্থায়ী আবাসনের যোগ্যতার শর্তাবলি:
রিয়েল এস্টেটে BRL ৭,০০,০০০ (প্রায় ১,১৪,১৮,৪২৬ টাকা) বা ব্রাজিলিয়ান ব্যবসায় BRL ৫,০০,০০০ (প্রায় ৮১,৫৬,০১৯ টাকা) বিনিয়োগ করতে হবে।
বিনিয়োগটি স্থায়ী আবাসনের সময়কাল পর্যন্ত বজায় রাখতে হবে।
আপনি দক্ষ কর্মী হতে হবে, যেমন বিজ্ঞানী, গবেষক, অধ্যাপক ইত্যাদি।
অর্থের প্রমাণ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের স্থায়িত্ব প্রদর্শন করতে হবে।
ব্রাজিলিয়ান কোনও কোম্পানির চাকরির অফার বা চুক্তি থাকতে হবে এবং অন্তত ২–৪ বছর সেই আইনগত মর্যাদা বজায় রাখতে হবে।
অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে উল্লেখিত নিয়মিত পেনশন আয়ের প্রমাণ দেখাতে হবে।
কিছু সাধারণ প্রয়োজনীয়তা:
বৈধ পাসপোর্ট
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (যাতে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই উল্লেখ থাকবে)
ব্রাজিলে বৈধ প্রবেশ ও থাকার প্রমাণ
কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, পারিবারিক সম্পর্ক বা অন্যান্য যোগ্যতার প্রমাণস্বরূপ নথি
স্থায়ী আবাসনের মর্যাদা বজায় রাখতে সাধারণত টানা দুই বছরের বেশি সময় ব্রাজিলের বাইরে থাকা যাবে না।
আবেদন প্রক্রিয়া:
ধাপ ১: প্রাসঙ্গিক ভিসার জন্য বিনিয়োগ করুন ও প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করুন।
ধাপ ২: অস্থায়ী ভিসার আবেদনপত্র ও অন্যান্য নথি পূরণ করুন।
ধাপ ৩: আপনার আবেদন ব্রাজিলিয়ান কনস্যুলেট বা ব্রাজিলে থাকলে ফেডারেল পুলিশের কাছে জমা দিন।
ধাপ ৪: ১০০–৩০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৮,৮১৩–২৬,৪৪০ টাকা) আবেদন ফি প্রদান করুন, যা রেসিডেন্স অথরাইজেশন ফি, ন্যাশনাল মাইগ্রেশন রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করবে।
ধাপ ৫: নথিপত্র ও আবেদনপত্র ডিজিটালি বা সাক্ষাৎকারের সময় জমা দিন।
ধাপ ৬: অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করুন, যা সাধারণত ৪–৬ মাস সময় নেয়, তবে ভিন্ন হতে পারে।
ধাপ ৭: অনুমোদনের পর ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশের সঙ্গে নিবন্ধন করুন এবং আপনার রেসিডেন্ট আইডি কার্ড সংগ্রহ করুন।
একবার পিআর পেলে আপনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্রাজিলে থাকতে পারবেন, তবে আপনার আবেদন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার আওতায় পড়তে পারে। এছাড়া, পিআর থাকলেই নাগরিকত্ব মেলে না; এর জন্য আলাদা শর্ত পূরণ করতে হবে। আর পিআর বজায় রাখতে টানা দুই বছরের বেশি সময় ব্রাজিলের বাইরে থাকা যাবে না। যদিও ব্রাজিল পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য ও শর্ত পূরণকারীদের জন্য ভাল বিকল্প হতে পারে। তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে—উচ্চ করহার, প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজার এবং ব্রাজিলে বসবাসের জন্য পর্তুগিজ ভাষা জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
