আজকাল ওয়েবডেস্ক:সৌদি আরবের নারী সংশোধনাগারের এক ভয়াবহ চিত্র সম্প্রতি সামনে এসেছে। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে সেই বিষয়টিকে সামনে আনা হয়েছে। সেই সংবাদমাধ্যম সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, পুরুষের অনুমতি ছাড়া ‘দার আল-রিয়ায়া’ থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। একজন মহিলাকে মুক্তি দেওয়ার দু'টি উপায় আছে। তার পরিবারের একজন পুরুষ অভিভাবককে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি দিতে হবে, অথবা তাকে কাউকে বিয়ে করতে রাজি হতে হবে।
সৌদি আরব বিশ্বজুড়ে একটি সমৃদ্ধশালী ইসলামী দেশ। এখানেই পবিত্র মক্কা ও মদিনার ভূমি। রাজকীয়তা, তৈলজাত সম্পদ এবং বড় বড় অট্টালিকার জন্য বিখ্যাত দেশটি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় সৌদি আরব দ্রুত বর্ধনশীল, আধুনিক হয়ে উঠছে। কিন্তু সমস্ত জাঁকজমকের আড়ালে, কিছু নারকীয় সত্য লুকিয়ে আছে। তা অনেকের কাছে অজ্ঞাত।
সৌদি আরবের দার আল-রিয়ায়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহিলাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কেউ কেউ বলছেন, এই সংশোধনাগার কেবল তথাকথিত একটি নাম । বাস্তবে এটি এক গোপন কারাগার। নারীরা এখানে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন। ‘দ্য গার্ডিয়ানে’র প্রতিবেদন অনুসারে, দার আল-রিয়ায় আটক নারীরা শারীরিক ও মানসিক, দু'ভাবে নির্যাতিত হন। কিছু প্রাক্তন বন্দী ফাঁস করেছেন যে, তাদের চামড়ায় সরাসরি গরম ছেঁকা দেওয়া হতো। নিয়মিতভাবে মারধর হত।
অনেক নারী নির্যাতন এবং একাকীত্বের যৌথ চাপে ভেঙে পড়েছেন। কেউ কেউ এমনকি কারাগারের ভেতরে আত্মহত্যাও করেছেন। তাদের কাহিনি ভয়াবহ। অনেকে মুক্তির পরেও খোলাখুলি কথা বলতে ভয় পান।
কেন নারীদের সাথে এত নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়?
দার আল-রিয়ায়া, ১৯৬০-এর দশকে মহিলাদের জন্য 'পুনর্বাসন কেন্দ্র' নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু এর বন্ধ দরজার পিছনে, নির্যাতন আর বর্বরতার গল্পগুলি ভয়ঙ্ক চিত্র তুলে ধরে। ভিতরে থাকা মহিলাদের প্রায়শই চাবুক দিয়ে পেটানো হয়। কখনও গুরুতর অপরাধের শাস্তি হিসেবে, কখনও আবার কেবল প্রার্থনা মিস করার জন্য। তাদের ধর্মীয় পাঠে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়, তারা না চাইলেও।
দার আল-রিয়ায়ায় বন্দী নারীদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এমনকি বাইরের কারওর সঙ্গে কথা বলতেও দেওয়া হয় না। সৌদি আরব থেকে পালিয়ে আসা মারিয়াম আলদোসারির মতে, ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের মনে এখানকার আতঙ্ক ঢুকে যায়।
তিনি তাঁর ভয়াবহ স্মৃতির কথা বলেছেন, 'যখন আমার বয়স মাত্র ১৩, তখন আমার বাবা আমাকে সতর্ক করতেন। যদি আমি কখনও অবাধ্য হই, তাহলে তিনি আমাকে সরাসরি দার আল-রিয়ায় পাঠিয়ে দেবেন।' শাস্তির কারণ অবাক করার মতো৷ কখনও তাঁর স্বামীর মতের বিরোধিতা করা, কখনও বা বাড়ি থেকে অনুমতি ছাড়া বেরিয়ে পড়া। এমন কী অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ নাকচ করে দেওয়াতেও শাস্তি পেতে হয়৷
