আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের উপর আরোপিত সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
শুক্রবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তিন সদস্য ডেবোরা রস, মার্ক ভিসি ও রাজা কৃষ্ণমূর্তি এই প্রস্তাব রাখেন পরিষদে।
তাঁদের দাবি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা জাতীয় জরুরি অবস্থার আওতায় এই শুল্ক আরোপ ‘অবৈধ’ এবং ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবটির লক্ষ্য ২০২৫ সালের ২৭ অগস্ট ভারতের উপর আরোপ করা অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ ‘সেকেন্ডারি’ শুল্ক প্রত্যাহার করা।
এর আগে আরোপিত পাল্টা শুল্কের সঙ্গে মিলিয়ে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA)-এর আওতায় একাধিক ভারতীয় পণ্যের উপর মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।
এর আগে মার্কিন সিনেটে ব্রাজিলের উপর আরোপিত অনুরূপ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব আনা হয়েছিল, পাশাপাশি জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করার দাবি ওঠে।
কংগ্রেসওম্যান ডেবোরা রস বলেন, ‘নর্থ ক্যারোলিনার অর্থনীতি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে গভীরভাবে যুক্ত। রাজ্যে ভারতীয় সংস্থাগুলি এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে, যার ফলে জীবনবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি নর্থ ক্যারোলিনার উৎপাদকরা প্রতিবছর কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করে।’
কংগ্রেসম্যান মার্ক ভিসি বলেন, ‘ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার। এই অবৈধ শুল্ক উত্তর টেক্সাসের সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপাচ্ছে, যাঁরা ইতিমধ্যেই মূল্যবৃদ্ধির চাপে রয়েছেন।’
অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভুত কংগ্রেসম্যান রাজা কৃষ্ণমূর্তির বক্তব্য, ‘এতে শৃঙ্খল ব্যাহত হচ্ছে, মার্কিন শ্রমিকদের ক্ষতি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের খরচ বাড়ছে। এই শুল্ক প্রত্যাহার করলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও মজবুত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার স্বার্থ বা নিরাপত্তা জোরদার করার বদলে এই শুল্ক সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে দিচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের খরচ বাড়াচ্ছে। এই শুল্ক তুলে নিলে ভারত-আমেরিকার যৌথ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা লক্ষ্য এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’
এই প্রস্তাবকে কংগ্রেসের বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ট্রাম্পের একতরফা বাণিজ্য নীতির বিরোধিতা করা এবং ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক পুনর্গঠন করা।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরেই রস, ভিসি ও কৃষ্ণমূর্তি-সহ কংগ্রেসম্যান রো খানা এবং আরও ১৯ জন সাংসদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি দিয়ে শুল্কনীতি প্রত্যাহার ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মেরামতের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কংগ্রেসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের উপর ট্রাম্পের শুল্ক প্রত্যাহার কংগ্রেসের সাংবিধানিক বাণিজ্যিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের বৃহত্তর প্রয়াসের অংশ। জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের একতরফা ও ভ্রান্ত বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা।’
প্রসঙ্গত, গত আগস্টে ট্রাম্প প্রশাসন ১ অগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। কয়েক দিনের মধ্যেই আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়। ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়।
