আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন যে তিনি বাণিজ্যিক চাপ দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, মে মাসে “অপারেশন সিঁদুর” এর সময় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তখন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে ২৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, যার পরেই দু’দিনের মধ্যে সংঘাত থেমে যায়।
ট্রাম্প বলেন, “আমি তখন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করছিলাম। মোদি ও শেহবাজ — দু’জনকেই আমি খুব ভালো চিনি। তারা দু’জনেই শক্তিশালী মানুষ। তখন আমি শুনলাম, সাতটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়েছে। আমি মোদিকে ফোন করে বললাম, ‘আমরা এখন বাণিজ্য চুক্তি করতে পারব না, তোমরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছ।’ এরপর আমি পাকিস্তানকেও ফোন করলাম, বললাম ‘তোমরাও যুদ্ধ শুরু করেছ, আমরা ব্যবসা করব না।’ দু’দেশই তখন যুদ্ধের মেজাজে।”
নিজের বক্তব্যে ট্রাম্প আরও বলেন, “মোদি খুবই শক্তিশালী মানুষ। দেখতে যেমন শান্ত, তেমন নন। তিনি বললেন, ‘না, আমরা লড়ব।’ আমি অবাক হয়ে গেলাম, বললাম, ‘এ কি সেই মোদি যাকে আমি চিনি?’ কিন্তু আমি দু’দেশকেই বললাম, যদি যুদ্ধ না থামে তাহলে ২৫০% শুল্ক বসবে। অর্থাৎ ব্যবসা বন্ধ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা যুদ্ধ থামাল। কেউ মারা গেল না। লাখ লাখ প্রাণ বাঁচল।”
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ছে উত্তেজনা, ইজরায়েলি বিমান হানায় মৃত শতাধিক
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, ওই সময় ভারত ও পাকিস্তান তাঁর কাছে ফোন করে শান্তির বার্তা দেয়। তিনি বলেন, “দুই দিন পর তারা ফোন করে জানায়, যুদ্ধ বন্ধ করেছে। এমন কাজ বাইডেনের মতো কেউ পারত না। আমি গর্বিত যে আমি যুদ্ধ থামাতে পেরেছিলাম।”
এছাড়া ট্রাম্প দাবি করেন, আজারবাইজান সংঘাতও নাকি তাঁর মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়েছিল, যার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অভিনন্দন জানান। ভারত সরকার এর আগে বারবার জানিয়েছে যে ভারত–পাকিস্তান সংঘাতে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও বলেছেন, “ভারতের সার্বভৌম সিদ্ধান্তে কোনো বিদেশি নেতা হস্তক্ষেপ করেননি।”
লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ‘এক্স’-এ লেখেন, “দেশে দেশে ট্রাম্প মোদিকে অপমান করছেন। এবার দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে বললেন, তিনি বাণিজ্যের ভয় দেখিয়ে মোদিকে যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করেছিলেন, এবং সাতটি বিমান গুলি করে নামানো হয়েছিল।” রাহুল আরও লেখেন, “মোদিজি, ভয় পাবেন না, উত্তর দিন। সাহস দেখান।”
“অপারেশন সিঁদুর” নামে পরিচিত ঘটনাটি ছিল কাশ্মীরের পাহালগাঁও-এ ২৬ জন বেসামরিকের মৃত্যু ঘটানো এক জঙ্গি হামলার প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ। ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু দুই দেশের সরকারই যুদ্ধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে—বিশেষত যখন তিনি দাবি করছেন যে তাঁর বাণিজ্যিক হুমকি ও ফোনকলের ফলেই ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল। তবে তাঁর বক্তব্যে যে বেশ কিছু তথ্য ও সংখ্যা (যেমন “সাতটি বিমান গুলি করে নামানো”) বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মেলে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রাম্পের বক্তব্যে যেমন অতিরঞ্জন ও আত্মপ্রচার প্রবল, তেমনি ভারতের কূটনৈতিক মহল ও বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভও স্পষ্ট। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দাবি মার্কিন নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের নিজস্ব ‘নায়কোচিত’ চিত্র গঠনের অংশ বলেই মনে হচ্ছে।
