আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলীয় বালিয়াড়ি ধরে হাঁটলে হয়তো আপনি বুঝতেই পারবেন না, পায়ের নিচেই কেউ আপনাকে দেখছে। নরম বালুর তলায়, সিল্কে মোড়া গুহায়, এক ছোট বাদামি মাকড়সা নীরবে অপেক্ষা করছে শিকারের জন্য। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস-এর একদল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন যে, এই মাকড়সাগুলোর মধ্যে এক প্রজাতি আসলে দুইটি আলাদা প্রজাতি। যা এতদিন ধরে একটি বলেই ধরা হচ্ছিল।
গবেষণাটি শুরু হয় একটি বিশেষ প্রজাতিকে কেন্দ্র করে, যা ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলজুড়ে পাওয়া যায়। বহু বছর ধরে এটি একটিমাত্র প্রজাতি বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় প্রকাশ পেল এক নতুন সত্য। দেখতে এক হলেও জিনগত দিক থেকে তারা সম্পূর্ণ আলাদা।
গবেষণার প্রধান লেখক প্রফেসর জেসন বন্ড, যিনি ইউসি ডেভিসের এনটোমোলজি ও নেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক, বলেন, “বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০,০০০ প্রজাতির মাকড়সা চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে হয়তো আরও লক্ষাধিক প্রজাতি আবিষ্কারের অপেক্ষায় আছে, এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতের নিচেও।”
ট্র্যাপডোর মাকড়সাগুলো বালুর নিচে সিল্কে মোড়া গর্ত খুঁড়ে থাকে। গর্তের মুখে একটি ছোট দরজা বানানো হয়, যা আশেপাশের মাটির সঙ্গে এমনভাবে মিশে থাকে যে বাইরে থেকে বোঝা যায় না। মাকড়সাটি দরজার পাশে বসে থাকে, যতক্ষণ না কোনো পোকা তার নাগালের মধ্যে আসে। মুহূর্তের মধ্যে দরজা খুলে শিকার শেষ।
গবেষণার সহলেখক ও পিএইচডি ছাত্রী এমা জোকিম জানান, “ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন পর্যন্ত চারটি ট্র্যাপডোর মাকড়সা প্রজাতি পাওয়া গেছে, যেগুলো কেবল উপকূলীয় বালিয়াড়িতেই বাস করে। আমরা যে প্রজাতিটি নিয়ে কাজ করছিলাম, সেটি সবচেয়ে বিস্তৃত অঞ্চলে পাওয়া যায় মন্টেরের কাছের মস ল্যান্ডিং থেকে শুরু করে বাজা ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত।”
তবে এই বিস্তৃতি বিভ্রান্তিকর ছিল। জিনোম বিশ্লেষণে দেখা গেল, উপকূলজুড়ে থাকা জনসংখ্যাগুলোর মধ্যে গভীর জেনেটিক ফারাক আছে। ছোট নদী, বালুর ধরন, জলবায়ু বা উদ্ভিদের বৈচিত্র্য তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রজনন বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে। এভাবেই বিবর্তন নীরবে নিজের কাজ করেছে।
প্রফেসর বন্ড সাধারণত নতুন প্রজাতির নাম রাখেন তাঁদের নামে, যারা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। এর আগে তিনি স্টিফেন কোলবার্ট, নিল ইয়াং এবং বারাক ওবামার নামেও মাকড়সার প্রজাতির নামকরণ করেছিলেন। এই আবিষ্কার শুধু বৈজ্ঞানিক কৌতূহল নয়, পরিবেশগত সতর্কবার্তাও বয়ে এনেছে।
নির্মাণকাজ, ভূমিক্ষয়, অগ্নিকাণ্ড ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে তাদের আবাসভূমি ক্রমেই ছোট হচ্ছে। জোকিম বলেন, “বিশেষ করে এরা এখন কেবল সান ডিয়েগো অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অত্যন্ত ভয়াবহ। এই মাকড়সাগুলি এত দ্রুত নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে পারে না।”
গবেষকরা মনে করছেন, এই প্রজাতিগুলোর সুরক্ষার জন্য উপকূলীয় বালিয়াড়িগুলোকে সংরক্ষণ করা এখন অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই নীরব, অদৃশ্য প্রাণীরাই প্রমাণ করছে—প্রকৃতির গভীরে এখনও লুকিয়ে আছে অগণিত অজানা গল্প, যা আমাদের চোখের সামনেই মাটি ও সিল্কের আড়ালে ঘুমিয়ে আছে।
