আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় স্থান, অবিশ্বাস্য তথ্য এবং প্রাকৃতিক বিস্ময় রয়েছে যা প্রায়শই আমাদের অবাক করে দেয়। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে শুরু করে অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা, পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যা আমাদের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। আমরা সকলেই জানি যে সর্বদা দিনের পরেই রাত আসে, তারপর আবার আসে দিন। এভাবেই চলতে থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে সূর্যাস্থ হয় না প্রায় ৭৬ দিন।

পৃথিবীর একমাত্র স্থান কোথায় যেখানে ৭৬ দিন ধরে সূর্য অস্ত যায় না?

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে দিন এবং রাতের প্রাকৃতিক চক্রটি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। কল্পনা করুন এমন একটি জায়গায় বাস করছেন যেখানে সূর্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে অস্ত যায় না। যদিও আমরা প্রায় সকলেই দিন থেকে রাতের পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত। এমন কিছু দেশ আছে যেখানে দিনের আলো প্রায় ৭৬ দিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে থাকে। এই অনন্য ঘটনাটি সাধারণত ‘মধ্যরাতের সূর্য’ নামে পরিচিত। এর ফলে সমগ্র অঞ্চলটি অবিরাম দিনের আলোর দেশে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন: পুড়ে গিয়েছিলেন জেন জি বিক্ষোভের সময়, নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ভারতে আনা হল চিকিৎসার জন্য

এই জায়গাটিকে মধ্যরাতের সূর্যের দেশ বলা হয় কেন?

এটি কেবল কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়, বাস্তব জগতের ঘটনা। পৃথিবীতে এমন একটি দেশ আছে যেখানে প্রায় দুই মাস সূর্য অস্তই যায় না। এই দৃশ্যটি চোখ ধাঁধানো এবং এই কারণেই এই স্থানটিকে ‘মধ্যরাতের সূর্যের দেশ’ বলা হয়। 

এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে নরওয়ের আর্কটিক সার্কেলের ভেতরের একটি ছোট শহর — স্ভালবার্ড (Svalbard)। এখানকার মানুষ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ‘মধ্যরাতের সূর্য’ (Midnight Sun) নামের এক অনন্য দৃশ্যের সাক্ষী হন, যা বিজ্ঞান ও প্রকৃতির এক অসাধারণ উপহার।

প্রতি বছর এপ্রিলের শেষ দিক থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্ভালবার্ড অঞ্চলে দিন-রাতের সীমারেখা মুছে যায়। টানা প্রায় আড়াই মাস ধরে সূর্য আকাশে থাকে, কিন্তু কখনও দিগন্তের নীচে নামে না। এই ঘটনা ঘটে পৃথিবীর অক্ষীয় কোণের কারণে। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে আবর্তনের সময় তার অক্ষ প্রায় ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকার ফলে গ্রীষ্মকালে আর্কটিক অঞ্চলে সূর্য দীর্ঘ সময় দৃশ্যমান থাকে। ফলে নরওয়ের মতো দেশগুলির উত্তর প্রান্তে দিনের আলো ২৪ ঘণ্টা দেখা যায়।

নরওয়েবাসীরা এই সময়টিকে উৎসবের মতো করে উদযাপন করেন। স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকরা রাতবিরেতে হাইকিং, কায়াকিং বা বন্যপ্রাণী দেখার মতো বিভিন্ন আউটডোর কার্যকলাপে মেতে ওঠেন। বিশেষ করে মধ্যরাতে পাহাড়ের চূড়া থেকে বা হিমবাহের পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্য দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই অবিস্মরণীয়। অনেক ফটোগ্রাফার এবং প্রকৃতিপ্রেমী এই দৃশ্য ধারণ করতে দূরদূরান্ত থেকে নরওয়েতে আসেন।

এই অঞ্চল শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই নয়, বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্যেও সমৃদ্ধ। গ্রীষ্মকালে এখানে মেরুভালুক, আর্কটিক শিয়াল, এবং অসংখ্য সামুদ্রিক পাখির দেখা মেলে। সূর্যের আলোয় আচ্ছন্ন বরফে ঢাকা পাহাড়, হিমবাহ ও সাগরের দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। কখনো সুযোগ পান, মধ্যরাতের সূর্য দেখতে স্ভালবার্ড ভ্রমণ আপনার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে। এখানে দাঁড়িয়ে আপনি উপলব্ধি করবেন— পৃথিবী সত্যিই বিস্ময়ে ভরা।