আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্কুলে তখন প্রার্থনায় মগ্ন পড়ুয়ারা। আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল আস্ত স্কুলবাড়ি। স্কুলের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে কমপক্ষে ৬৫ পড়ুয়া। এখনও পর্যন্ত এক পড়ুয়ার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারার আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ায়। স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব জাভা সিদোয়ারজো শহরে। পূর্ব জাভা পুলিশের মুখপাত্র জুলস আব্রাহাম জানিয়েছেন, সোমবার ওই স্কুলের ভবনে প্রার্থনা চলছিল। তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেই সময় শতাধিক পড়ুয়া উপস্থিত ছিল।
আচমকাই ভেঙে স্কুলের ভবন। তাতেই চাপা পড়ে পড়ুয়ারা। এখনও পর্যন্ত ৭৯ জন পড়ুয়াকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ৬৫ জন পড়ুয়ার আটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অক্সিজেন ও জল সরবরাহ করা হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা পেরিয়েও উদ্ধারকাজ চলছে।
ওই স্কুলের এক শিক্ষক আবদুস সালাম মুজিব জানিয়েছেন, স্কুলের ওই ভবনটি নির্মীয়মাণ। সেখানেই নীচের তলায় প্রার্থনা চলছিল। চারতলায় ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। সেখানে শ্রমিকেরাও ছিলেন। তখনই আচমকা দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলে মুহূর্তে পৌঁছয় পুলিশ, উদ্ধারকারী দল।
কয়েক ঘণ্টা পর ৭৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। ৬৫ জন এখনও চাপা পড়ে আছে। তাদের বয়স ১১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা পড়ুয়াদের জল ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিছানায় দুই সন্তানের নিথর দেহ, ফ্যানের থেকে ঝুলছে মা, ঘটনায় হতচকিয়ে সকলে
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই ভারতেও এমন এক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। স্কুলে প্রার্থনা শুরুর আগেই বিপদের আশঙ্কা করেছিল কয়েক পড়ুয়া। ক্লাসরুমে বসেই দেখতে পেয়েছিল, ছাদ থেকে বালি, পাথর খসে পড়ছে। যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় শিক্ষিকাকেও জানিয়েছিল তারা। একবার বলেওছিল, ছাদটি বোধহয় ধসে পড়তে পারে। কিন্তু পড়ুয়াদের কথার কোনও গুরুত্ব দেননি শিক্ষিকা। সেই গাফিলতিতেই ঘটল বিরাট দুর্ঘটনা। সরকারি স্কুলের ছাদ ধসে পড়ে প্রাণ গেল সাতজন পড়ুয়ার।
জানা গেছে, ছাদটি ধসে পড়ার আগেই শিক্ষিকাকে সতর্ক করেছিল কয়েকজন পড়ুয়া। উল্টে তাদের ধমক দিয়ে প্রার্থনায় মন দিতে বলেন শিক্ষিকা। এরপরই ব্রেকফাস্ট খেতে চলে যান। মন দিতে পোহা খাচ্ছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময়েই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে স্কুলের ছাদ। চাপা পড়ে কমপক্ষে ৬০ জন পড়ুয়া। তাদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২৭ জন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের ঝালাওয়াড় জেলায়। শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এক সরকারি স্কুলের ছাদ ধসে পড়ে সাত পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২৭ জন। ঘটনাটি ঘটেছে মনোহর থানা এলাকার পিপলোড়ি গভর্নমেন্ট স্কুলে। ওই স্কুলের ছাদের একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। সেদিন প্রার্থনার পর ক্লাসরুমে পড়ুয়ারা উপস্থিত ছিল। ইতিমধ্যেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ওই স্কুলের পাঁচ শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের একাংশ ওই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে। কমপক্ষে ৬০ জনের উপর ছাদটি ভেঙে পড়ে। একে একে সকলকেই উদ্ধার করা গেছে। মৃতদের মধ্যে ছ'বছরের এক খুদে পড়ুয়াও রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই সরকারি স্কুলভবনটি ভগ্নপ্রায় দশা ছিল। তবে এক মাস আগে রক্ষণাবেক্ষণের কিছু কাজ হয়। কিন্তু তারপরেই শুক্রবারে এমন ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটল।
দুর্ঘটনার পর ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া জানায়, 'প্রার্থনা চলাকালীন দেখতে পেয়েছিলাম, ছাদ থেকে বালি-পাথর ঝরে পড়ছিল। আমরা কয়েকজন শিক্ষকদের বিষয়টা জানিয়েওছিলাম তাঁরা আমাদের উল্টে ধমক দেন। এরপর তাঁরা ব্রেকফাস্ট করতে চলে যান। পোহা খাচ্ছিলেন শিক্ষকরা।'
পড়ুয়া আরও জানায়, 'সেদিন প্রার্থনার সময়ে শ্রেণিকক্ষের ভিতর আমরা বসেছিলাম। তখনই ছাদ থেকে বালি-পাথর পড়ছিল। শিক্ষিকরা ধমক দিয়ে নিজেদের আসনে বসতে বলেন। কিছুক্ষণ পরেই ছাদটি ধসে পড়ে। আমরা কয়েকজন পালিয়ে যেতে পারলেও, বাকিরা ধসে চাপা পড়ে যায়। যদি ওই সময়েই সবাইকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করা যেত, তা হলে হয়তো সবাই বেঁচে যেত।'
এই দুর্ঘটনার পরেই উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা। তিনিও বৈঠক করেন। বৈঠকের পর নির্দেশ দেন, সমস্ত স্কুলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার। কোনও স্কুল যেন ভগ্নপ্রায় দশায় না থাকে। অন্যদিকে দুর্ঘটনার পর শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মৃত পড়ুয়াদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তাঁরা। আহত পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘিরে এখনও তদন্ত চলছে।
