আজকাল ওয়েবডেস্ক: রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে যখন ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে ন্যাটো সমর্থিত ইউক্রেন, ঠিক সেই আবহে মস্কোর তূণ থেকে এমন এক অস্ত্রের ঘোষণা এল, যা আক্ষরিক অর্থেই পশ্চিমী দুনিয়ার বুক কাঁপিয়ে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর সেই অস্ত্রের নাম ‘পসাইডন’। গ্রিক সমুদ্রদেবতার নামে নামাঙ্কিত এই অস্ত্র কোনও সাধারণ টর্পেডো বা ক্ষেপণাস্ত্র নয়। এটি এক স্বয়ংক্রিয়, পারমাণবিক শক্তিচালিত এবং পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ডুবো-ড্রোন। সমুদ্রের তলা দিয়ে গিয়ে যা ধ্বংস করে দিতে পারে পৃথিবীর তাবড় তাবড় শহরকে।
এই অস্ত্র আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন স্বয়ং রুশ রাষ্ট্রপতি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই ঘোষণাকে সামরিক পর্যবেক্ষক মহল ‘কৌশলগত মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবেই দেখছে। তাঁদের মতে, ইউক্রেনকে সামনে রেখে ন্যাটো এবং আমেরিকা যেভাবে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার খেলায় মেতেছে, পসাইডন হল সেই খেলার ছক উল্টে দেওয়ার মতো এক ‘তুরুপের তাস’।
‘সাগরতলের দানব’ এই পসাইডন কেন এত ভয়ঙ্কর?
পসাইডনকে একটি ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল নিউক্লিয়ার-পাওয়ার্ড অটোনোমাস টর্পেডো’ বলা হচ্ছে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি দেখলেই বোঝা যাবে ঠিক কতটা শক্তিশালী এই অস্ত্র।
১। অসীম পাল্লা: এই ডুবো-ড্রোনের ভিতরে একটি নিজস্ব ক্ষুদ্র পারমাণবিক রিয়্যাক্টর রয়েছে। এর ফলে এর জ্বালানি কার্যত অফুরন্ত। এটি একবার জলে নামলে জল থেকে মাথা না তুলেই গোটা বিশ্ব পরিক্রমা করে আসতে পারে। আবার শত্রুর উপর আঘাত হানার জন্য সমুদ্রের গভীরে মাসের পর মাস সময় ধরে অপেক্ষা করতে পারে।
২। দুর্ভেদ্য গতি ও গভীরতা: পসাইডন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ( ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি) এবং সমুদ্রের অনেক গভীরে (১ কিলোমিটার পর্যন্ত) চলতে সক্ষম। এত গভীরে গিয়ে এই গতিতে চলা কোনও বস্তুকে ট্র্যাক করা বা ধ্বংস করা আমেরিকার বর্তমান কোনও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
৩। বিধ্বংসী পারমাণবিক সুনামি: এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি হল এর পেলোড বা পারমাণবিক বোমা বহন করার ক্ষমতা। ক্রেমলিন সূত্রের খবর, এটি ২ মেগাটন ক্ষমতার থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। আর আশ্চর্যের বিষয় হল, এর লক্ষ্যবস্তু কোনও একটি বা দু’টি যুদ্ধ জাহাজ নয়, বরং শত্রুপক্ষের উপকূলবর্তী বড় বড় শহর বা নৌঘাঁটি। এই বিপুল শক্তির বিস্ফোরণ সমুদ্র উপকূলে ২০০ ফুট উঁচু ‘তেজস্ক্রিয় সুনামি’ তৈরি করতে সক্ষম, যা একটি গোটা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে এবং কয়েক দশক ধরে সেই এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে বলে আশঙ্কা গবেষকদের।
কেন এই অস্ত্রের প্রয়োজন পড়ল?
মস্কোর মতে, এই পদক্ষেপকে কোনওভাবেই ‘আক্রমণাত্মক’ বলা চলে না, বরং এটি রাশিয়ার ‘আত্মরক্ষার’ তাগিদ থেকেই তৈরি। ক্রেমলিনের শীর্ষ মহল বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, আমেরিকা একতরফাভাবে ‘অ্যান্টি-ব্যালেস্টিক মিসাইল’ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিশ্বজুড়ে ‘মিসাইল শিল্ড’ বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। পাশাপশি ন্যাটোর সীমানা বাড়তে বাড়তে তা রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত এসে গিয়েছে। অর্থাৎ আমেরিকা চাইলেই রুশ সীমান্তের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করতে পারে। ন্যাটোর ক্রমাগত পূর্বমুখী সম্প্রসারণকে মস্কো তার অস্তিত্বের সংকট হিসেবেই দেখে। পাশাপাশি আমেরিকার ‘মিসাইল শিল্ড’ রাশিয়ার স্থল বা আকাশপথে ছোঁড়া ব্যালিস্টিক মিসাইলকে রুখে দিতে পারে। কিন্তু পসাইডন আঘাত হানে জলের তলা দিয়ে, যেখানে আমেরিকার কোনও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর নয়।
আরও পড়ুন: একসঙ্গে থাকলেই অশ্রাব্য গালাগালি করে, পাঁচ বন্ধুকে আলাদা থাকতে বাধ্য করল কর্তৃপক্ষ
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমী দুনিয়া যখন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে রাশিয়াকে নতজানু করতে চাইছে, তখন পসাইডনের মতো ‘অমোঘ’ অস্ত্রের ঘোষণা আসলে ভ্লাদিমির পুতিনের একটি স্পষ্ট বার্তা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর সেই বার্তাটি হল- রাশিয়া তার সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস করবে না, এবং প্রয়োজনে এমন জবাব দেবে যা আমেরিকার কল্পনারও অতীত।
