আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং তাঁর দুই সহ-গবেষক সম্প্রতি এমন একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যা ইতিমধ্যেই বৈজ্ঞানিক মহলে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, সৌরজগতের মধ্যে ঢুকে পড়া একটি রহস্যময় বস্তু — যার নাম ৩আই/আ্যাটলাস — হতে পারে একটি এলিয়েন মহাকাশযান, এবং সেটি চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই পৃথিবীতে আক্রমণ চালাতে পারে। দেখতে অনেকটা পুরুষাঙ্গের মতো! এই অবজেক্টটি আকারে ম্যানহাটনের মতো বিশাল, এবং প্রতি সেকেন্ডে ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে ছুটে চলেছে। ১ জুলাই চিলির ‘আ্যাটলাস’ টেলিস্কোপে এটি প্রথম ধরা পড়ে। এটি একটি ‘ইন্টারস্টেলার ভিজিটর’ বা আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু — যা আমাদের সৌরজগতে বাইরের কোনও তারকা পদ্ধতি থেকে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি এখন পর্যন্ত এমন ধরা পড়া তৃতীয় বস্তু।
এই গবেষণাপত্রটি এখনও পিয়ার-রিভিউ হয়নি, তবে এতে লেখকরা ব্যাখ্যা করেছেন— ৩আই/আ্যাটলাসের অস্বাভাবিক কক্ষপথ একে পৃথিবীর কাছে নিঃশব্দে ও নজরের বাইরে আসার সুবিধা করে দিয়েছে। বিশেষ করে, নভেম্বর মাসে এটি যখন সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসবে, তখন এটি পৃথিবী থেকে লুকিয়ে গিয়ে গতি কমিয়ে সৌরজগতে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার মতো ‘হাই-স্পিড ম্যানুভার’ চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণার অন্যতম লেখক, অ্যাভি লোয়েব, হার্ভার্ডের একজন প্রথিতযশা জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যিনি এর আগে ২০১৭ সালে ʻOumuamua নামক আরেকটি আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুকে এলিয়েন প্রযুক্তি বলে সন্দেহ করেছিলেন। এই নতুন গবেষণায় তাঁর সঙ্গী হয়েছেন অ্যাডাম হিববার্ড ও অ্যাডাম ক্রোল, যাঁরা লন্ডনের ‘ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্টারস্টেলার স্টাডিজ’-এর সঙ্গে যুক্ত।
তবে গবেষণার শুরুতেই লেখকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, “এই প্রবন্ধের বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে একটি কল্পনামূলক হাইপোথিসিসের উপর নির্ভর করে, যেটিকে লেখকরা অবশ্যই সত্য বলছেন না, তবে সেটি একটি বিশ্লেষণের যোগ্য এবং পরীক্ষাযোগ্য।” তাঁরা আরও উল্লেখ করেছেন, “যদি এই হাইপোথিসিস সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে মানবজাতির জন্য তার ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে হতে পারে, যদিও সেগুলিও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে পারে।”অবশ্য লেখকরা এটিও মেনে নিয়েছেন যে, বিষয়টি এক প্রকার ‘মজাদার বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন’ হিসেবেই করা হয়েছে এবং এই ধরনের কাল্পনিক অনুসন্ধানও বিজ্ঞানচর্চার একটি অংশ। তবে ৩আই/আ্যাটলাসের কক্ষপথ এবং গতি এখনো রহস্যে মোড়া, বিশেষত এটি যেভাবে শুক্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের খুব কাছাকাছি যাচ্ছে, তা নেহাত কাকতালীয় নয় বলে গবেষকরা মনে করছেন। তাঁদের ভাষায়, “এই ধরনের গতিপথ স্বাভাবিক নিয়মে ঘটার সম্ভাবনা মাত্র ০.০০৫%।”
আরও পড়ুন: নস্টালজিয়াকে পুঁজি করে কোটি টাকার মাসিক ব্যবসা! তাক লাগিয়ে দিলেন এই যুগল!
পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এখন আগ্রহভরে অপেক্ষা করছেন নভেম্বরে এই বস্তুটি সূর্যের নিকটবর্তী হওয়ার মুহূর্তটির, যখন এর প্রকৃত চরিত্র আরও স্পষ্ট হতে পারে। এলিয়েন নাকি বরফে মোড়া প্রাকৃতিক বস্তু— প্রশ্নটির উত্তর তখনই পাওয়া যাবে। ততদিন পর্যন্ত এই ‘মহাজাগতিক থ্রিলার’ নিয়ে উত্তেজনা চলবে বৈকি! এই রহস্যময় বস্তু ৩আই/আ্যাটলাস ঘিরে বৈজ্ঞানিকদের মাঝে যেমন কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ, কারণ অনেকেই এই ঘটনাকে বিখ্যাত ভবিষ্যৎবক্তা বাবা ভাঙ্গার কিছু ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন। বুলগেরিয়ার এই রহস্যময় মহিলা, যিনি ‘ব্যালকানদের নস্ট্রাডামাস’ নামে পরিচিত, একাধিক যুগান্তকারী ঘটনার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়— যেমন চেরনোবিল দুর্ঘটনা, ৯/১১ হামলা, কিংবা সুনামির আঘাত। তাঁর একটি ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছিল, “২০৫০ সালের আগেই পৃথিবীর বাইরে থেকে এক অজানা বুদ্ধিমান জাতি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে— কারও উপকারে, আবার কারও সর্বনাশ ডেকে আনবে।”
এছাড়াও ২০২৫সালের কাছাকাছি একটি “মহাকাশীয় বিপর্যয়ের” ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “মানবজাতি এক নতুন ভয়ানক বাস্তবতার মুখোমুখি হবে, যা স্বাভাবিক বুদ্ধিতে আগে বোঝা সম্ভব হবে না।” এই প্রেক্ষিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— ৩আই/আ্যাটলাস কি সেই ভবিষ্যদ্বাণীর ইঙ্গিতবাহী বস্তু? এটি কি শুধুই একখণ্ড বরফ-শিলা, নাকি কোনো অজানা প্রযুক্তির বাহক? বিজ্ঞানীরা হয়তো এখনও নিশ্চিত নন, কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে জল্পনা-কল্পনা আর অলৌকিক বিশ্বাসের ঢেউ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। বাবা ভাঙ্গার কথাগুলি, বিজ্ঞান এবং রহস্যের এই মিলনবিন্দুতে এসে যেন এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে— এক ভয় ও কৌতূহলের সম্মিলিত অনুভূতি, যা নভেম্বরে পৌঁছে চূড়ায় উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
