আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনি গ্রহের বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটান নিয়ে বহু দশক ধরেই বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অব্যাহত। এবার নতুন এক রহস্যের সন্ধান মিলল। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল–এর গবেষকরা প্রথমবার টাইটানের বায়ুমণ্ডলের অস্বাভাবিক আচরণ চিহ্নিত করেছেন।


ক্যাসিনি-হাইগেন্স মিশনের তথ্য থেকে নতুন আবিষ্কার
নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এবং ইতালীয় মহাকাশ সংস্থার যৌথ ক্যাসিনি-হাইগেন্স মিশন থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করেই এই আবিষ্কার। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সংগৃহীত থার্মাল ইনফ্রারেড ডেটা পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেছেন যে টাইটানের ঘন ও কুয়াশাচ্ছন্ন বায়ুমণ্ডল উপগ্রহের পৃষ্ঠের সঙ্গে একযোগে ঘোরে না। বরং সেটি একপ্রকার জাইরোস্কোপের মতো দুলতে থাকে এবং ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থানও বদলায়।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সায়েন্স স্কুলের পোস্টডক্টরাল গবেষক এবং প্রধান লেখক লুসি রাইট বলেন, “টাইটানের বায়ুমণ্ডলের আচরণ সত্যিই অদ্ভুত! মনে হচ্ছে এটি যেন জাইরোস্কোপের মতো মহাকাশে নিজেকে স্থির রাখছে। আমরা অনুমান করছি অতীতে কোনও এক ঘটনার ফলে বায়ুমণ্ডল তার ঘূর্ণন অক্ষ থেকে সরে গিয়েছিল, আর সেখান থেকেই আজকের এই দুলুনি।”


টাইটানের একটি বছর প্রায় ৩০ পৃথিবী বছরের সমান। গবেষকরা দেখেছেন, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার ক্ষেত্রটি উত্তর–দক্ষিণ মেরুর সঙ্গে পুরোপুরি সাযুজ্যপূর্ণ নয়। বরং এর কেন্দ্র ধীরে ধীরে সরে যায়, আর সেই সরে যাওয়াটাই ঋতুচক্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


সহলেখক ও ব্রিস্টলের গ্রহবিজ্ঞানী প্রফেসর নিক টিয়ানবি বলেন, “সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, বায়ুমণ্ডলের এই হেলান সূর্য বা শনির প্রভাবে নয়, বরং মহাকাশে স্থির দিকেই রয়ে যায়। এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত এবং নতুন এক রহস্যের দ্বার খুলে দিচ্ছে।”

আরও পড়ুন: ইউপিআই লেনদেনে বাড়তি চার্জ? কী জানাল আরবিআই


এই আবিষ্কার সরাসরি প্রভাব ফেলবে নাসার আসন্ন ড্রাগনফ্লাই মিশন–এ। ২০৩০-এর দশকে টাইটানে পৌঁছবে এই ড্রোন–সদৃশ রোটরক্রাফট। অবতরণের সময় এটি টাইটানের ঝোড়ো বাতাসে ভেসে নামবে—যা পৃষ্ঠের ঘূর্ণনের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ দ্রুত।


তাই টাইটানের বায়ুমণ্ডল কীভাবে ঋতু অনুযায়ী হেলে যায়, তা বোঝা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই দুলুনিই অবতরণ-পথকে প্রভাবিত করবে এবং কোথায় ড্রাগনফ্লাই নেমে আসবে তা নির্ধারণে সহায়তা করবে।


সহলেখক ও নাসার গডার্ড ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. কনর নিক্সন বলেন, “আমাদের গবেষণা প্রমাণ করে, ক্যাসিনির আর্কাইভ থেকে এখনও আশ্চর্যজনক তথ্য আবিষ্কৃত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে আংশিক নির্মিত এই যন্ত্র মহাকাশে কোটি কোটি কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে, আর আজও তা থেকে আমরা বৈজ্ঞানিক সাফল্য পাচ্ছি। টাইটানের বায়ুমণ্ডল যেন তার নিজের ঘূর্ণন থেকে বিচ্ছিন্ন এক ঘূর্ণায়মান শীর্ষ—এটি শুধু টাইটানের জন্য নয়, পৃথিবীর মতো গ্রহের বায়ুমণ্ডল বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলছে।”


টাইটান একদিকে পৃথিবীর মতো ঘন বায়ুমণ্ডল ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য বহন করে, আবার অন্যদিকে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক জগৎ। ব্রিস্টলের এই আবিষ্কার স্পষ্ট করল—টাইটানের বায়ুমণ্ডল কেবল রহস্যময় নয়, বরং সৌরজগতের বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ও উত্তেজনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।